বাসভূমির চৌর্যবৃত্তি
আমরা বেশ কিছু দিন ধরেই লক্ষ্য করছি যে, অষ্ট্রেলিয়া থেকে প্রকাশিত বাংলা ওয়েব ম্যাগাজিন বাসভূমি (www.basbhumi.com) কোন ধরনের সৌজন্যতা ছাড়াই মুক্তমনায় প্রকাশিত হুমায়ূন আজাদের প্রবন্ধসমূহ বিনা অনুমতিতে প্রকাশ করা শুরু করেছে। এর সূত্রপাত হয়েছে হুমায়ূন আজাদের প্রবচনগুচ্ছ দিয়ে। পরবর্তীতে বাসভূমি ছেপে দেয় মুক্তমনায় ডঃ আজাদের নিজের পাঠানো ধর্মানুভূতির উপকথা নামের বিখ্যাত প্রবন্ধটি। মুক্তমনায় লেখাটি পিডিএফ ফরম্যাটে ছিল। বাসভূমি সেটাকে jpg ফরম্যাটে ছেপেছে। তবে ফন্টের ধরণ এবং প্রকৃতি, রঙ এর বিন্যাস দেখলে যে কেউই পরিষ্কার বুঝতে পারবেন যে মুক্তমনার পিডিএফ ফাইলটাকেই বাসভূমি jpg তে রূপান্তর করে নিয়েছে মাত্র। মুক্তমনার ফাইলটির একেবারে উপরে বড় বড় করে মুক্তমনার লোগো ছিল। বাসভূমি সম্পাদক শুধু কষ্ট করে যে কাজটা করেছেন সেটা হচ্ছে ওই লোগোটাকে ছেঁটে দেওয়া। আর বুদ্ধি করে ফাইলের একেবারে শেষে ডঃ হুমায়ূন আজাদের পরিচিতিসহ মুক্তমনার যে কপিরাইট সিম্বল ছিল সেটাকে তিনি হাওয়া করে দিয়েছেন। মুক্তমনার ধর্মানুভূতির উপকথা ফাইল এবং বাসভূমির ফাইল আপনারা নিজেরাই দেখে নিতে পারেন।
ধর্মানুভূতির উপকথা প্রবন্ধটির মুক্তমনার লিংকঃ
https://gold.mukto-mona.com/Articles/humayun_azad/Dharmanubhutir_Upakatha.pdf
একই প্রবন্ধের বাসভূমির লিংক সমূহঃ
http://basbhumi.com/Humayun-Dhorma1.htm
http://basbhumi.com/Humayun-Dhorma2.htm
http://basbhumi.com/Humayun-Dhorma3.htm
বাসভূমির গত সংখ্যা থেকে হুমায়ুন আজাদ আলোকিত সংকলন নামে হুমায়ুন আজাদের ‘রবীন্দ্রনাথের চোখে নারী’ প্রবন্ধটি ধারাবাহিকভাবে ছাপা হচ্ছে। মুক্তমনার বুদ্ধিমান নিয়মিত পাঠকেরা এতক্ষনে ঠিকই বুঝে গেছেন যে এক্ষেত্রেও কি ঘটেছে। জ্বী হ্যা, আপনাদের অনুমান একশতভাগ সত্যি। মুক্তমনার ফাইল চুরি করেই বাসভূমি সম্পাদক তা ছাপিয়ে দিয়েছেন তার বিখ্যাত (!) ওয়েব ম্যাগাজিনে। এবার অবশ্য পিডিএফ ফাইলকে jpg এ রূপান্তরের কষ্টে আর যাননি তিনি। খুব ব্যস্ত ছিলেন হয়তো। তাই সরাসরি মুক্তমনার করা পিডিএফ ফাইলগুলোকেই ব্যবহার করে ফেলেছেন তিনি। যে কেউ একটু কষ্ট করে বাসভূমি থেকে ফাইলগুলোকে ডাউনলোড করে এর properties থেকে description এ গেলেই Author এর নাম হিসাবে Avijit Roy দেখতে পাবেন। আপনাদের সুবিধার জন্য প্রবন্ধটির বাসভূমির লিংক নিচে দিয়ে দিলাম।
http://basbhumi.com/Azad-Nari-1.pdf
http://basbhumi.com/Azad-Nari-2.pdf
তবে যারা ওইটুকু কষ্টও করতে চান না তাদের জন্য আরো সহজ বুদ্ধি আছে। বাসভূমির দ্বিতীয় লিংকটাতে ক্লিক করে ফাইলটা খুলুন। হুমায়ূন আজাদেরর নামের উপর কার্সরটা নিয়ে যান। দেখবেন Hyperlink হিসাবে মুক্তমনাতে হুমায়ূন আজাদের Author Page এর ঠিকানা দেখাচ্ছে। মজার ঘটনা, তাই না? বাসভূমির লেখা আর লিংক দেখাচ্ছে মুক্তমনার। মজা আরো আছে। দ্বিতীয় পর্বের শুরুতেই পূর্ববর্তী পর্বের লিংক দেওয়া আছে। ওটাতে ক্লিক করুন। এক নিমিষেই ডাউন আন্ডারের বাসভূমি ছেড়ে আপনি সোজা চলে আসবেন সাতসমুদ্র আর তের নদী পার হয়ে উত্তর আমেরিকার মুক্তমনার রাজ্যে। বাসভুমি সম্পাদক আগের প্রবন্ধে অনেক ক্যারিকেচার করে মুক্তমনার নাম গন্ধকে আড়াল করার প্রানান্তকর চেষ্টা করেছেন। যদিও সামান্য একটু নজর দিলেই সেই দুর্বুদ্ধিগুলো ধরে ফেলা যায়। তবে বর্তমান প্রবন্ধের ক্ষেত্রে চৌর্যবৃত্তির সব লক্ষণগুলোই একেবারে কুতুবদিয়া বাতিঘরের আলোকিত বাতির মতো জ্বলজ্বল করে জ্বলছে।
বাসভূমির এই ক্রমাগত চৌর্যবৃত্তিতে অতীষ্ট হয়ে অভিজিৎ রায় মুক্তমনার পক্ষ থেকে বাসভূমির সম্পাদককে এই ধরনের অনৈতিক কাজ থেকে বিরত থাকার জন্য একটি মেইল পাঠিয়েছেন। কিন্তু দূর্ভাগ্যজনক যে, আমার জানামতে এখন পর্যন্ত সেই মেইলের কোন প্রতিউত্তরই বাসভূমি সম্পাদকের কাছ থেকে আসেনি। আমি বেশ অবাকই হচ্ছি। বাসভূমির সম্পাদক নিজেকে আলোকিত মানুষ এবং তার ওয়েবসাইটকে আলোকিত ওয়েবসাইট বলে সগর্বে ঘোষনা দিয়ে রেখেছেন। সেই আলোকিত ওয়েবসাইটের আলোকিত সম্পাদকের একটা মেইলের উত্তর দেওয়ার সৎ সাহস নেই সেটা বিশ্বাস করতে বড্ড কষ্ট হচ্ছে। নাকি নিজেকে আলোকিত প্রদীপ ভাবার সুখ স্বপ্ন দেখতে দেখতে প্রদীপের নীচের জমাট অন্ধকারটুকুর কথা ভুলে গেছেন তিনি?
আন্তর্জালে বিভিন্ন ওয়েবসাইট ব্যাঙের ছাতার মতো জন্ম হওয়ার পর থেকেই এই ধরনের সমস্যা আসলে শুরু হয়েছে। কোন লেখা যে লেখকের বা সেই লেখা যেখানে প্রকাশিত হয়েছে তাদের অনুমতি ছাড়া ব্যবহার করা অনৈতিক কাজ সেটা আমরা অনেকেই ভুলে গিয়েছি। কিছু দিন আগে হঠাৎ করে একটি বাংলাদেশ (www.aktibangladesh.com) নামের একটি ওয়েবসাইটের সম্পাদকের কাছ থেকে তাদের ওয়েবসাইটে নতুন কিছু প্রবন্ধ যুক্ত হয়েছে, এই মর্মে একটি ঘোষনা আমার ব্যক্তিগত মেইলে এসে হাজির হয়েছে। কৌতুহল বশত ওয়েবসাইটটিতে ক্লিক করে দেখি সেখানে আমার অনেক আগের লেখা একটি প্রবন্ধ সুন্দর একটা প্রচ্ছদের মধ্যে বসে আছে। সম্পাদক মহাশয়, যার সাথে আমার কোন ধরনের কোন যোগাযোগ না থাকা সত্ত্বেও, তাদের ওয়েবসাইট আপডেট করেছেন সেটি আমাকে জানাতে মোটেও ভোলেননি। কিন্তু আমার লেখাটা ছাপানোর আগে আমার অনুমতি নেওয়াটা যে স্বাভাবিক ভদ্রতা সেটুকু দিব্যি ভুলে গেছেন তিনি।
এতো গেল বিভিন্ন ওয়েবসাইটের লেখা না বলে নেওয়ার কাহিনী। এর বাইরেও ওয়েবসাইটগুলোর আরেক কাহিনী আছে। আপনার লেখা ছাপায়নি তারা, অথবা আপনিই সেখানে পাঠাননি। কিন্তু অন্য কোন একজন অন্য কোথাও প্রকাশিত আপনার কোন লেখা নিয়ে আপনাকে মনের সুখে ধোলাই করছে সেখানে। একবার হঠাৎ করে দেখি সদালাপে মোঃ মোস্তফা কামাল নামে এক ভদ্রলোক আমার কোন এক লেখার বিষয়বস্তু নিয়ে আমাকে বাকশালী, ইসলাম বিদ্বেষী, ভারতের দালাল, এবং ‘র’ এর পেইড এজেন্ট বানিয়ে আচ্ছামত গালমন্দ করে চলেছেন। আমি কিভাবে বাকশালী হলাম তা অবশ্য আমি নিজেও জানিনা। বাকশাল কি জিনিষ সেটা আমার স্মৃতিতে পর্যন্ত নেই। বাকশালের জন্ম এবং তার অকাল মৃত্যুর সময়কালীন সময়ে আমি যে নিতান্তই দুগ্ধপোষ্য বালক ছিলাম সেটা বোধহয় মোস্তফা কামাল সাহেবের জানা ছিল না। ‘র’ এর এজেন্টের মতো এতো গোপনীয় বিষয়ও বা তিনি জানলেন কি করে সেটাও এক বিস্ময় বটে। যাই হোক, আমি মেইল করে সম্পাদক মোহাম্মদ আমান উল্লাহ সাহেবকে জানালাম যে, যে লেখার ভিত্তিতে কামাল সাহেব আমার জাত পাত উদ্ধার করছেন সেই লেখাটা কিন্তু আমি সদালাপে পাঠাইনি। কাজেই আপনি দয়া করে নৈতিকতার খাতিরে ওই সমালোচনাটি আপনার ওয়েবসাইট থেকে তুলে নিন। আমার মেইল পেয়ে তিনি মনে হয় আকাশ থেকে পড়লেন। জানালেন, ‘আপনার লেখা আমরা ছাপি নাই তাতো জানি না। সমালোচনা যেহেতু ছাপা হয়েই গেছে ওটা আর তুলে নিতে পারবো না। আপনি বরং আপনার লেখাটা তাড়াতাড়ি পাঠিয়ে দিন’। বুঝুন ঠেলা! আগে লেখক তার প্রকাশিত না হওয়া লেখার জন্য পিটুনি খাবেন, তারপর তিনি কেন পিটুনি খেলেন সেটা জায়েজ করার জন্য লেখাটা সেখানে পাঠাবেন। এর আগ পর্যন্ত পাঠকরা জানবেনই যে কি কারণে ওই বেচারাকে এভাবে লেংগি মারা হচ্ছে। বলিহারি বুদ্ধি বটে! তবে আমান উল্লাহ সাহেব যে কাজটি করেছিলেন সেটার জন্য উনাকে অবশ্যই ধন্যবাদ দিতেই হয়। উনি মোস্তফা কামালের সমালোচনাটির উপর একটা নোট দিয়েছিলেন উনাকে সতর্ক করে দিয়ে। তবে সেই লেখাতে সূক্ষ্ণ একটা চালাকি করেছিলেন এই বলে যে, ‘আমরা জানতাম না যে মূল লেখাটি সদালাপে ছাপা হয় নাই (কেমন আলাভোলা সম্পাদকরে বাবা! কে জানো? নিজের পত্রিকায় কি ছাপা হয় তাই তিনি জানেন না)। জানার সাথে সাথেই লেখককে অনুরোধ করেছিলাম লেখাটি পাঠানোর জন্য, কিন্তু তিনি তা পাঠাতে রাজী হননি’। আজকেও সদালাপে দেখলাম মুক্তমনায় পোষ্ট হওয়া অভিজিৎ এর এক লেখাকে আচ্ছামত দলাই মলাই করেছে রায়হান নামের এক ভদ্রলোক। আমি মোটামুটি নিশ্চিত যে, আলাভোলা টাইপের আমান উল্লাহ সাহেব এবারো জানেন না যে অভিজিৎ এর লেখাটি সদালাপে আদৌ ছাপাই হয়নি।
এতো গেলো আন্তর্জালিক পত্রিকাসমূহের কায়কারবার। ছাপার অক্ষরে লেখা পত্রিকাগুলোও চৌর্যবৃত্তিতে কম যায় না। উত্তর আমেরিকা থেকে প্রকাশিত মাসিক পত্রিকা পড়শী আমার খুব পছন্দের একটি পত্রিকা। দেশের বাইরে থেকে ছাপার হরফে পত্রিকা বের করে সেটাকে বৈচিত্র্যময় বিষয় দিয়ে ভরে তোলা এবং গুনগতমানের দিক দিয়ে উতুঙ্গ অবস্থানে নিয়ে যাওয়া যে সম্ভব, সেটা পড়শী এর মধ্যেই দারুণভাবে প্রমান করেছে। আমার নিজেরও বেশ কিছু লেখা ছাপা হয়েছে পড়শীতে। কিন্তু আমার সেই পছন্দের পত্রিকাও তার মার্চ-এপ্রিল, ২০০৮ সংখ্যায় মুক্তমনায় প্রকাশিত আকিমুন রহমানের লেখা প্রবন্ধ ‘স্বামীর ছাঁচে বিকশিত প্রতিভারাঃ বেগম রোকেয়া’ কোন ধরনের অনুমতি বা স্বীকৃতি ছাড়াই একেবারে নিজের মনে করে ব্যবহার করে ফেলেছে। কিন্তু কথায় বলে না চোর যতই সেয়ানা হোক না কেন, চুরির চিহ্ন সবসময়ই থেকে যায় কোন না কোনভাবে। এখানেও তা হয়েছে। মুক্তমনার প্রবন্ধটির প্রথম লাইনের প্রথম শব্দ রোকেয়াতে হাইপার লিংক করার কারণে যে আন্ডার লাইন এসেছিল, পড়শীর প্রুফ রিডার বেচারা সেটা বুঝতে না পেরে (ভেবেছে হয়তো শব্দটাতে জোর দেওয়া হয়েছে) সেই শব্দটাকে আন্ডারলাইন সমেতই রেখে দিয়েছে। (পড়শীতে ছাপানো প্রবন্ধটি দেখার জন্য এখানে ক্লিক করুন।)
তবে এর বিপরীত চিত্রও আছে। মাস দু'য়েক আগে মেলবোর্ন থেকে চঞ্চল খান নামের এক ভদ্রলোক বৈশাখী উপলক্ষে প্রকাশিত তাদের এক ম্যাগাজিনে আমার লেখা বাঙালি সংস্কৃতি এবং হিন্দি ভূতের আছর প্রবন্ধটি ছাপানোর জন্য অনুমতি চেয়ে পাঠিয়েছেন। অনুমতি না নিয়ে ছাপালেও আমার হয়তো করার কিছুই থাকতো না বা আমার হয়তো নজরেই আসতো না। কোথায় কোন মেলবোর্নে কি ছাপা হচ্ছে তা নিশ্চয়ই আমার জানার কথা না। কিন্তু তিনি লেখকের অনুমতি নেওয়ার সৌজন্যতাটুকু ঠিকই প্রকাশ করেছেন। আহা! সবাই যদি চঞ্চল খানের মতো এমন হতো। তাহলে আর এই লেখাটা লিখে সময় নষ্ট করতে হতো না আমার।
এই সুযোগে একটা জিনিষ পরিষ্কার করে যাই এখানে। আমরা জ্ঞানকে কুক্ষিগত করে রাখতে চাই না। মুক্তমনার জন্মই হয়েছে জ্ঞানকে মুক্ত এবং বিকশিত করার জন্য। মুক্তমনায় প্রকাশিত যে কোন লেখা যে কেউ ইচ্ছা করলেই যে কোন সময় ব্যবহার করতে পারেন। তবে পুনঃ প্রকাশের আগে দয়া করে লেখকের কাছ থেকে অথবা মুক্তমনার মডারেটরদের কাছ থেকে সৌজন্যতাটুকু দেখিয়ে অনুমতিটা চেয়ে নিন। আর তাও যদি না করতে চান, লেখা ছাপানোর পরে নিদেন পক্ষে ভদ্রতা করে এইটুকু লিখে দিন যে লেখাটি মুক্তমনা থেকে নেওয়া। ওইটুকু হলেই চলবে আমাদের। আর কিছু চাওয়া নেই আমাদের।
মায়ামি, ফ্লোরিডা।
===============================================
মুক্তমনার মডারেটর, 'মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক।