পরকালের পরাবাস্তবতা
আশা জেগে রয় চিরন্তনবিজ্ঞান, পরলোক এবং জীবনের অর্থ
মূলঃ মাইকেল শারমার
ভাষান্তরঃ ফরিদ আহমেদ
(শেষ পর্ব)
প্রার্থনা এবং রোগ নিরাময় গবেষণা
২০০৬ সালের এপ্রিলে The American Heart Journal স্বাস্থ্য এবং রোগীর নিরাময়ের উপর ফলদায়ক প্রার্থনার প্রভাব নিয়ে এ পর্যন্ত করা সবচেয়ে বিস্তারিত গবেষণা প্রকাশিত হয়। বিজ্ঞান এবং ধর্মবিষয়ক গবেষণায় উদ্দেশ্যমূলক সহায়তা প্রদানকারী বলে পরিচিত টেম্পলিটন ফাউন্ডেশন (Templeton Foundation) এর অর্থানুকূল্যে এবং ‘প্রার্থনা ফলদায়ক’ এই মতের প্রবক্তা হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটি মেডিক্যাল স্কুলের কার্ডিওলোজিষ্ট হার্বার্ট বেনসন এর নেতৃত্বে পরিচালিত এই গবেষণার ফলাফল বিজ্ঞান এবং ধর্মে উৎসাহী উভয়পক্ষের লোকেরাই লুফে নেয়। ছয়টি আমেরিকান হাসপাতালের ১৮০২ জন রোগীকে এলোপাতাড়িভাবে তিনটি দলে ভাগ করা হয়। প্রার্থনা পাওয়া ৬০৪ জনকে বলা হয়েছিল যে তারা প্রার্থনা পেতেও পারে অথবা নাও পেতে পারে। ৫৯৭ জন কোন প্রার্থনা পায়নি এবং তাদেরকেও বলা হয়েছিল যে তারা প্রার্থনা পেতেও পারে অথবা নাও পেতে পারে। প্রার্থনা পাওয়া ৬০১ জনকে বলা হয়েছিল যে তারা প্রার্থনা পাবে। সার্জারির আগের রাত থেকে প্রার্থনা করা শুরু হয় এবং তা চলতে থাকে প্রতিদিন ধরে পরবর্তী দুই সপ্তাহ। প্রার্থনাকারীদেরকে নিজেদের মত করেই প্রার্থনা করার সুযোগ দেওয়া হয়। তবে বলে দেওয়া হয় যে তারা যেন ‘দ্রুত নিরাময় এবং কোন ধরনের জটিলতাহীন সাফল্যজনক সার্জারির’ জন্য প্রার্থনা করে থাকেন।
এই গবেষণার ফলাফল ছিল দ্ব্যর্থহীন। কোন দলের মধ্যেই স্ট্যাটিসটিক্যালি সিগনিফিক্যান্ট কোন পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়নি। তার মানে হচ্ছে প্রার্থনা কোন কাজে আসেনি। শুধু যে কাজে আসেনি তা নয় বরং আরো বাজে দিক হচ্ছে যে, যে দলের রোগীরা জানতো যে তাদের জন্য প্রার্থনা করা হবে তাদের মধ্যে সামান্য কিছু পরিমাণে বেশি জটিলতা (যদিও স্ট্যাটিসটিক্যালি সিগনিফিক্যান্ট নয়) দেখা দিয়েছিল। একে বলে ‘নোসেবো এফেক্ট’ (Nocebo Effect)। কাজেই, মামলা খতম।
আগের অনেক গবেষণায় যেখানে প্রার্থনার ইতিবাচক ফলাফলের দাবি করা হয়েছিল, সেগুলোতে নিচেরগুলো সহ অসংখ্য পদ্ধতিগত ত্রুটি ছিলঃ
১. নিয়ন্ত্রণের অভাবঃ এই গবেষণাসমূহের অনেকগুলোই বয়স, লিঙ্গ, শিক্ষাগত যোগ্যতা, জাতিসত্তা, আর্থ-সামাজিক মর্যাদা, বৈবাহিক অবস্থা, ধর্মনিষ্ঠার মাত্রা ইত্যাদি হস্তক্ষেপকারী চলককে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছে। প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে সব ধর্মই বহুগামিতা, মদ্যপান ও মাদকদ্রব্যের ব্যবহার এবং ধূমপানের মত অস্বাস্থ্যকর আচরণকে নিষিদ্ধ করেছে। ওই চলকগুলোকে যখন নিয়ন্ত্রণ করা যায় তখন আর আগের মতো তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল থাকে না। বয়স্ক মহিলাদের নিতম্বের সার্জারি থেকে নিরাময়ের এক গবেষণায় বয়স চলককে নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল। গির্জায় উপস্থিতির হারের সাথে রোগ নিরাময়ের সম্পর্কের অন্য এক গবেষণা একেবারেই ধর্তব্যের মধ্যে নেয়নি যে অসুস্থ লোকজনেরা গির্জায় সাধারণত কম যেয়ে থাকে। এর সাথে সম্পর্কযুক্ত আরো একটি গবেষণা ব্যায়ামের পরিমাণ চলককেও নিয়ন্ত্রণ করতে ব্যর্থ হয়েছিল।
২. ফলাফলের পার্থক্যঃ গোঁড়া খ্রীষ্টানদের দ্বারা প্রার্থনাকৃত কার্ডিয়াক পেশেন্টদের উপর করা এক বহুল প্রচারিত গবেষণায় ২৯ টি ফলাফল চলক পরিমাপ করা হয়। কিন্তু এদের মধ্যে মাত্র ৬ টি চলকে উন্নতি পরিলক্ষিত হয়েছিল। একই ধরনের অন্যান্য গবেষণায় বিভিন্ন ফলাফল পরিমাপ ছিল তাৎপর্যপূর্ণ। অর্থপূর্ণ হতে হলে একই পরিমাপগুলোকে একই ধরনের অন্যান্য গবেষণাগুলোতেও তাৎপর্যপূর্ণ হতে হবে। কারণ অনেক ফলাফল যদি পরিমাপ করা হয় তবে এদের মধ্যে কিছু কিছু দৈবক্রমেই তাৎপর্যপূর্ণ সহ-সম্পর্ক দেখাতে পারে।
৩. ফাইল-ড্রয়ার সমস্যাঃ ধর্মনিষ্ঠা এবং মরণশীলতার উপর করা কয়েকটি গবেষণায় (ধার্মিক লোকেরা অধার্মিকদের চেয়ে বেশি দিন বাঁচে বলে মনে করা হয়) বেশ কিছু ধর্মীয় চলক ব্যবহার করা হয়েছে। তবে সুচতুরভাবে সেগুলোই প্রকাশ করা হয়েছে যেগুলো এই দুইয়ের মধ্যে তাৎপর্যপূর্ণ সহ-সম্পর্ক রয়েছে বলে প্রমাণ করেছে। অন্য গবেষণায় একই চলকসমূহ ব্যবহার করে ভিন্ন সহ-সম্পর্ক খুঁজে পাওয়া গেছে। এবং সেখানেও অবশ্য শুধুমাত্র তাৎপর্যপূর্ণগুলোই প্রকাশ করা হয়েছে। বাকীগুলোকে অ-তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফলের ড্রয়ারে ফেলে রাখা হয়েছে। যখন সব সব চলককে একসাথে গাঁথা হয়, তখন দেখা যায় যে ধর্মনিষ্ঠার সাথে মরণশীলতার আসলে কোন সম্পর্ক নেই।
৪. কার্যকর সংজ্ঞাঃ প্রার্থনার প্রভাব নিয়ে যখন কোন পরীক্ষা করা হয় তখন মূলতঃ কি পর্যবেক্ষণ করা হয়? উদাহরণস্বরূপ, কোন ধরনের প্রার্থনা করা হয়? (খ্রীষ্টান, ইহুদী, মুসলমান, বৌদ্ধ, উইকান এবং শ্যামান প্রার্থনা কি একই?) কে বা কাকে প্রার্থনা করা হয়? (ঈশ্বর, যীশু এবং একটি বিশ্বজনীন জীবনী শক্তি কি সমপর্যায়ের?) প্রার্থনার কতক্ষণ ধরে এবং কতবার করা হবে? (দুইটা দশ মিনিটের প্রার্থনা কি বিশ মিনিটের একটা প্রার্থনার সমান?) কত জন লোক প্রার্থনা করছে এবং ধর্মে তাদের মর্যাদা কি জরুরী? (একজন পাদ্রীর প্রার্থনা কি দশজন উপাসনাকারীর প্রার্থনার সমান?) বেশিরভাগ প্রার্থনা গবেষণায় এই ধরনের কার্যকর সংজ্ঞার অভাব রয়েছে অথবা এই ধরনের সংজ্ঞার ক্ষেত্রে বিভিন্ন গবেষণায় কোন মিলই নেই।
৫। ধর্মতাত্ত্বিক জটিলতাঃ ঈশ্বর যদি সর্বজ্ঞ এবং সর্বশক্তিমান্ হয় তাহলে তাকে স্মরণ করানো বা স্তুতিবাক্যে তুষ্ট করানোর কোন প্রয়োজনই নেই যে কারো নিরাময়ের প্রয়োজন। প্রার্থনা করার পরেও যে সকল রোগী মারা গেছে তাদেরই বা ব্যাখ্যা কি? বৈজ্ঞানিক প্রার্থনা ঈশ্বরকে স্বর্গীয় গবেষণাগারের ইঁদুরে পরিণত করেছে যা জন্ম দিয়েছে অপবিজ্ঞান এবং নিকৃষ্ট ধর্মের।
তথ্য ক্ষেত্র, মর্ফিক অনুরণন, এবং বিশ্বজনীন জীবনী শক্তি
আপনি কি কখনো খেয়াল করেছেন যে দিনের শেষে সংবাদপত্রের শব্দজট (crossword puzzle) খোলা অনেক সহজ? আমি কখনোই খেয়াল করি নাই। রুপার্ট শেলড্রেক এর মতে যেহেতু সকালের সম্মিলিত সাফল্য সাংস্কৃতিক মরফিক ক্ষেত্র দিয়ে রিজোনেট করে সে কারণেই এটা সম্ভবপর হয়। শেলড্রেকের মরফিক রিজোনান্স তত্ত্বে ( মরফ বা ‘তথ্যের ক্ষেত্র’) একই ধরনের ক্ষেত্র স্পন্দন তোলে এবং বিশ্বজনীন শক্তির মধ্যে তথ্য আদান প্রদান করে। সময়ের সাথে সাথে প্রত্যেক ধরনের প্রাণীই এক একটি বিশেষ ধরনের একমুখী সম্মিলিত স্মৃতিতে পরিণত হয়। শেলড্রেক তার ১৯৮১ সালে প্রকাশিত গ্রন্থ ‘A New Science of Life’ এ লিখেছেন ‘প্রকৃতির নিয়মতান্ত্রিকতা অভ্যাসগত। বস্তু বা বিষয়সমূহ যেমন আছে তেমনই আছে, কারণ তারা যেমন ছিল তেমনই আছে’। শেলড্রেক বলেছেন, মরফিক রিজোনান্স হচ্ছে ‘অরগানিজম এবং প্রজাতির ভিতরকার সম্মিলিত স্মৃতির রহস্যময় টেলিপ্যাথি ধরনের আন্তঃসম্পর্কের ধারণা’ এবং ভৌতিক অঙ্গ-প্রত্যঙ্গ, হোমিং পিজিওন, কীভাবে কুকুর টের পায় মনিব বাড়ী ফিরেছে বা আড়াল থেকে কেউ তাকিয়ে থাকলে টের পেয়ে যাওয়া ইত্যাদি বিষয় ব্যাখ্যা করেছে। শেলড্রেক ব্যাখ্যা করেছেন যে, ‘দৃষ্টির হয়তো দ্বিমুখী প্রক্রিয়া আছে, আলোর অন্তর্মুখী গমন এবং মানসিক প্রতিচ্ছবির বহির্মুখী নির্গমন’। শেলড্রেকের ওয়েবপেজ থেকে এক্সপেরিমেন্টাল প্রটোকল ডাউনলোড করে হাজার হাজার মানুষ পরীক্ষা করেছেন এবং সেই সব পরীক্ষা ইতিবাচক, রিপিটেবল, এবং উচ্চ তাৎপর্যপূর্ণ ফলাফল প্রদান করেছে। যার অর্থ হচ্ছে, পিছন থেকে কেউ তাকালে সেটা যে বোঝা যায় সে বিষয়ে ব্যাপক বিস্তৃত অনুভূতিপ্রবণতা রয়েছে।
আসুন, এই দাবিকে ভালভাবে পরীক্ষা করা যাক। প্রথমতঃ কোন ওয়েবপেজ প্রটোকলের ভিত্তিতে অপরিচিত লোকদের মাধ্যমে কোন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা সাধারণত ঘটে না। এক্ষেত্রে জানার কোন উপায়ই নেই যে ওই সমস্ত অপেশাদার লোকেরা ইন্টারভেনিং চলকসমূহ এবং পরীক্ষকের পক্ষপাতকে কীভাবে সামাল দিয়েছে। দ্বিতীয়তঃ মনোবিজ্ঞানীরা এই ধরনের বর্ণনাকে বিপরীত আত্ম-সন্তুষ্টি প্রভাব বলে বাতিল করে দেনঃ একজন লোক কেউ তাকে পিছন থেকে দেখছে ভেবে ঘাড় ঘুরিয়ে তাকাচ্ছে, ওই ঘাড় ঘোরানো যে লোক দেখছে বলে মনে করা হচ্ছে তার দৃষ্টি আকর্ষণ করবে, ফলশ্রুতিতে সেই লোক প্রথম ব্যক্তির দিকে তাকাবে। আর তাতেই প্রথম ব্যক্তি নিশ্চিত হবে যে তার দিকে কেউ তাকাচ্ছে সেই অনুভূতিটা আসলেই সত্যি। তৃতীয়তঃ ২০০০ সালে লন্ডনের মিডলসেক্স বিশ্ববিদ্যালয়ের জন কাউয়েল শেলড্রেকেরে প্রস্তাবিত পরীক্ষণ প্রটোকল ব্যবহার করে আনুষ্ঠানিকভাবে একটি পরীক্ষা চালান। তিনি এই পরীক্ষার জন্য ১২ জন স্বেচ্ছাসেবককে ব্যবহার করেন যারা প্রত্যেকেই ১২ টা সিকোয়েন্সে ২০ বার তাকানো এবং না তাকানো পরীক্ষায় অংশ নিয়েছিল। শেষ নয়টা সেশনে নির্ভুলতার ফিডব্যাক দেওয়া হয়। ফলাফল হচ্ছে, পরীক্ষায় অংশগ্রহণকারীরা তাদের দিকে কেউ তাকাচ্ছে কিনা তা সঠিকভাবে তখনই বলতে পেরেছিল যখন তাদেরকে নির্ভুলতার ফিডব্যাক দেওয়া হয়েছিল। কাউয়েলের মতে এর কারণ হচ্ছে, অংশগ্রহণকারীরা আসলে জেনে গিয়েছিল যে পরীক্ষার ট্রায়ালগুলির অনুক্রমে দৈবতা (Note: দৈবতা – randomness) ছিলনা। ইউনিভার্সিটি অব হার্টফোর্দসশায়ারের মনোবিজ্ঞানী রিচার্ড ওয়াইজম্যান শেলড্রেকের গবেষণার পুনরাবৃত্তি করার চেষ্টা করেন এবং দেখেন যে গবেষণায় অংশগ্রহণকারী ব্যক্তিরা যে হারে তাদের দিকে চোরা দৃষ্টিকে সনাক্ত করতে পারেন তার হার দৈব হারের চেয়ে খুব বেশি নয়। চতুর্থতঃ পরীক্ষকের পক্ষপাতিত্বের সমস্যাও রয়েছে। ইন্সটিটিউট অব নোয়েটিক সায়েন্সেস এর গবেষক ম্যারিলিন শ্লিজ (psi বিশ্বাসী) ওয়াইজম্যানের (psi অবিশ্বাসী) সাথে শেলড্রেকের গবেষণার অনুকরণ করেন এবং দেখেন যে, যেখানে শ্লিজের ফলাফল এসেছে পরিসংখ্যানগতভাবে তাৎপর্যপূর্ণ সেখানে ওয়াইজম্যানের ফলাফল হয়েছে পুরোপুরি দৈব।
শেলড্রেক বলেন যে, সংশয়বাদীরা মরফিক ফিল্ডের সুপ্ত ক্ষমতাকে অবহেলা করে, যেখানে বিশ্বাসীরা এই ক্ষমতাকে আরো বর্ধিত করে। ওয়াইজম্যানের ক্ষেত্রে শেলড্রেকের মন্তব্য হচ্ছে, ‘সম্ভবত বিষয়টি সম্পর্কে তার নেতিবাচক প্রত্যাশা সচেতন বা অচেতনভাবে তার গবেষণায় প্রভাব ফেলেছে’।
হয়তো। কিন্তু কথা হচ্ছে কীভাবে আমরা নেতিবাচক psi এবং না-psi এর মধ্যে পার্থক্য করতে পারি? কথায় আছে না, অদৃশ্য আর অস্তিত্বহীনকে যে একই রকম বলে মনে হয়।
মধ্য ভূমি
কথা হচ্ছে, তাহলে অবস্থাটা দাঁড়াচ্ছে কি? প্রকৃতিগতভাবে আমি বেশ আশাবাদী ধরনের মানুষ। কাজেই, আমি বর্তমান অবস্থায় সন্দেহগ্রস্থ ভবিষ্যতের অগ্নিশিখায় সংশয়বাদের ঠান্ডা পানি ঢেলে দিতে চাই না। তবে আমি সত্য হিসাবে কি আশা করি তার চেয়ে প্রকৃত সত্য কি তাকেই বেশি গুরুত্ব দেই। এবং সেভাবেই আমি বিষয়গুলোকে অনুধাবন করি।
আমি চোপড়া, বেম, গোস্বামী, শেলড্রেক এবং তাদের মতো আরো অনেককেই জানপ্রাণ দিয়ে বিশ্বাস করতে চাই। সত্যি সত্যিই চাই। আমি স্কুলে থাকা অবস্থাতেই ধর্মকে পরিত্যাগ করেছি। কিন্তু মাঝে মাঝেই আমি আমার বিজ্ঞান এবং প্রকৃতির দিকে ধাবমান মনকে আমার প্রাক্তন এভানজেলিক অনুভূতিতে হাবুডুবু খেতে দেখি। এ কারণেই বলা যেতে পারে আমি সংশয়বাদী। এভানজেলিকরা যা দেয় সেটা হচ্ছে অনেকখানি ধর্মের মতোই। সব কিছুরই প্রত্যাশা দেয়, কিন্তু আসলে কিছুই দেয় না (শুধু আশা ছাড়া)। এবং পুরোটাই আসলে বিজ্ঞানের সম্পূর্ণ বিপরীত বিশ্বাসের উপর প্রতিষ্ঠিত।
আমি বিশেষ করে সংশয়াচ্ছন্ন হই তখনই যখন দেখি মানুষ বলাবলি করে যে ‘বিশাল কিছু’ আমাদের জীবদ্দশায় আমাদেরকে রক্ষা করবে এবং আমাদের গভীরতম আবেগগত চাহিদাকে পরিপূর্ণ করবে। এভানজেলিকরা কখনোই দাবি করে না যে পরবর্তী প্রজন্মেই যীশুর পুনরুত্থান ঘটতে যাচ্ছে (অথবা অন্যেরা পরিত্রাণ পেয়ে যাবে শুধু তারা ছাড়া।) একইভাবে ‘ধ্বংস অবশ্যম্ভাবী’ মতের ধর্মনিরপেক্ষ প্রবক্তারা সাধারণত তাদের বরাদ্দ সময়সীমার মধ্যেই সভ্যতার ধ্বংস হবে বলে ভবিষ্যদ্বাণী করেন (এবং অতি অবশ্যই সেই কেয়ামত থেকে সামান্য যে ক’জন রক্ষা পাবে তারাই হবে তার অংশ)। একইভাবে, ধর্ম এবং ধর্মনিরপেক্ষ ইউটোপিয়া উভয়েরই ভবিষ্যৎবক্তারা তাদের নিজেদেরকে বাছাই করা কতিপয় লোক ভাবেন এবং মনে করেন যে স্বর্গ তাদের একেবারে হাতের মুঠোয়।
স্বর্গ কোথায়? এখানেই স্বর্গ। বর্তমানই হচ্ছে আমাদের স্বর্গ। আমাদের মধ্যেই স্বর্গ আবার আমাদেরকে ছাড়াই স্বর্গ। আমাদের চিন্তা এবং কাজের মধ্যেই স্বর্গ নিহিত। আমাদের জীবন এবং ভালবাসাতেই সিক্ত স্বর্গ। আমাদের পরিবার এবং বন্ধুদের মধ্যেই স্বর্গ দীপ্তমান। আমাদের প্রত্যয়ের বলিষ্ঠতা এবং আত্মার বৈশিষ্ট্যতার মাঝেই বিরাজমান স্বর্গ।
জীবন চিরস্থায়ী না হলেও, আশা ঠিকই জেগে থাকে চিরন্তন।
সম্পূর্ণ প্রবন্ধটি পিডিএফ এ পড়ার বা ডাউনলোড করার জন্য এখানে ক্লিক করুন।
মায়ামি, ফ্লোরিডা [email protected]
===============================================
মুক্তমনার মডারেটর। 'মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক।
লেখাটি আমাদের মুক্তমনার পরবর্তী বই -‘বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়?’– প্রকাশিতব্য সংকলন-গ্রন্থের জন্য নির্বাচিত হল - মুক্তমনা সম্পাদক।