নোটবুক এবং একজন বিজ্ঞানীর প্রতিকৃতি
(পর্ব-৩)
লিওনার্দোর বুদ্ধিবৃত্তিক উত্তরাধিকার (২)
ইউরোপ যখন অন্ধকার যুগে পড়ে হাঁসফাঁস করছে, সেই ফাঁকে আরবীয় চিন্তাবিদরা আলকেমি, গণিত এবং জ্যোতির্বিদ্যায় এগিয়ে গেছে অনেক দূর। আরব থেকে নবম শতাব্দীর পর থেকে কিছু সংরক্ষিত জ্ঞান ইউরোপে আশ্রমের মাধ্যমে ঢুকে পড়ে। কিন্তু অজ্ঞতার মহাসমুদ্রে এই জ্ঞান ছিল অতি ক্ষুদ্র কিছু বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। এছাড়া যেহেতু এই জ্ঞান যারা অর্জন করেছিলেন তারা ধর্মীয় বিষয় নিয়ে কাজ করছিলেন, সেহেতু গ্রীক বিজ্ঞান খুব দ্রুতই ধর্মীয় অন্ধবিশ্বাস দিয়ে কলুষিত হয়ে পড়ে। এই সময় প্লেটোনিক আধ্যাত্মবাদ (Platonic mysticism) খুব নীরবে বাতিল হয়ে যায় এবং তার বদলে খ্রীষ্টীয় ধর্মবিশ্বাস যুক্ত হয়ে এরিস্টটলের দর্শন জায়গা করে নেয়।
স্টোয়িকদের অন্ধ ধারণার বিপরীতে এক অর্থে এটাকে উন্নতিই বলা যায়। কিন্তু নতুন এই দর্শনও নতুন ধরনের আচ্ছন্নতা বা ভাবালুতা নিয়ে এসেছিল। ঈশ্বর এবং এরিস্টটলের এই সংযোজন অর্থ হয়ে দাঁড়াল যে, এরিস্টটলের বিজ্ঞানের উপর আক্রমণকে ঈশ্বরের উপর আক্রমণ হিসাবে বিবেচিত হতে লাগলো। খ্রীষ্টীয় ধর্মবিশ্বাস এবং এরিস্টটলীয় দর্শন মিলেমিশে বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ডের এক নতুন চিত্র দাঁড় করালো। ঈশ্বর এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ড তৈরি করেছেন। তিনি সকল কার্যকলাপ নিয়ন্ত্রণ করে চলেছেন। চার্চের সর্বশক্তিমান ঈশ্বরের ধারণার সাথে এরিস্টটলের ধ্যান ধারণা যেমন ’অনড় সঞ্চালকের’ ধারণা মিলে গিয়েছিল একেবারে খাপে খাপ।
বৈজ্ঞানিক অনুসন্ধানের জন্য প্রচণ্ড বিরূপ সময় হওয়া সত্ত্বেও মধ্যযুগ বেশ কিছু সংখ্যক গুরুত্বপূর্ণ মৌলিক চিন্তাবিদের জন্ম দিয়েছিল, যারা ধীরে ধীরে যুক্তিবাদের পুনর্জন্মে অবদান রেখে গিয়েছিলেন। এই চিন্তাবিদেরাও সন্ন্যাসী ছিলেন এবং তাদেরকে পণ্ডিত বা মনীষী বলা হতো। তবে মনীষীরাও আচ্ছন্ন ছিলেন প্রাকৃতিক দর্শন এবং ধর্মতত্ত্বকে একীভূত করায়। কিন্তু একেবারে অন্ধ ছিলেন না তারা। কোন কিছুকে যুক্তিসম্পন্নভাবে বিচার বিবেচনা করার কিছুটা ক্ষমতা ঠিকই তাদের ছিল। এই পণ্ডিতদের মধ্যে অন্যতম ছিলেন সেইন্ট টমাস একুইনা, এলবার্টাস ম্যাগনাস এবং রজার বেকন।
টমাস একুইনা এবং এলবার্টাস ম্যাগনাস সনাতনী এরিস্টটলীয় দর্শনকেই আঁকড়ে ছিলেন এবং দৃঢ়ভাবে বিশ্বাস করতেন যে, সৃষ্টির কেন্দ্রীয় বিষয় হচ্ছে মানুষ এবং ঈশ্বর এই বিশ্ব ব্রক্ষ্মাণ্ড সৃষ্টিই করেছেন মানুষের জন্য। তবে সনাতন বিশ্বাসে বিশ্বাসী হওয়া সত্ত্বেও তাদের চিন্তা-চেতনা যথেষ্ট মৌলিক এবং দুঃসাহসিক ছিল। তারা মনে করতেন যে প্রকৃতি এবং বস্তুজগতের গবেষণা মানুষকে ধর্মের অন্তর্নিহিত অর্থ বুঝতে সাহায্য করতে পারে।
অক্সফোর্ড পণ্ডিত রজার বেকন প্রচলিত চিন্তা চেতনার থেকে বেরিয়ে এসেছিলেন অনেকখানিই। তিনিই প্রথম ব্যক্তি যিনি গবেষণার উপকারিতা বুঝতে পেরেছিলেন এবং তিনটি সুদূর প্রসারী নিবন্ধ Opus Majus, Opus Minor এবং Opus Tertium রচনা করেন। এই তিনটি নিবন্ধেই তিনি তার দর্শন এবং পরীক্ষণের পদ্ধতিকে সুশৃঙ্খলভাবে ব্যাখ্যা করেন। বেকনের প্রচেষ্টা বিজ্ঞানের ইতিহাসে তাকে অত্যন্ত মর্যাদার আসনে বসিয়েছে। যদিও তার জীবদ্দশায় তার কাজকে প্রচলিত বিশ্বাসের বিচ্যুতি এবং এরিস্টটলীয় ধারণার জন্য ধ্বংসাত্মক বলে বিবেচনা করা হতো। এবং এই অপরাধে পোপ চতুর্থ নিকোলাস তাকে সারাজীবনের জন্য কারাবন্দী করে রাখেন।
চিত্র ৬: অক্সফোর্ড পণ্ডিত রজার বেকন (১২১৪ – ১২৯৪)
মনীষীদের ধারণাসমূহ ত্রয়োদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে এসে তুঙ্গে পৌঁছায়। ইউরোপের বৌদ্ধিক সমাজে এরিস্টটলের দর্শন গভীর আগ্রহের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল এবং পরবর্তী পাঁচশ’ বছর বলা যায় কোন রকম বিরোধিতা ছাড়াই ইউরোপের বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে তা পড়ানো হয়। তবে, রেঁনেসার কারণে এরিস্টটলের দর্শনকে যেভাবে আগে অনুধাবন করা হতো তা পাল্টে যায় এবং অন্য গ্রীক এবং রোমান চিন্তাবিদদের ধারণাসমূহকেও দ্রুত পূনর্মূল্যায়ন করা হয়। অন্ধকার যুগের পর সমাজের শিক্ষার দিকে আবার ঝুঁকে পড়ার মাধ্যমেই ধর্মের ছায়া থেকে বের হয়ে বিজ্ঞানের আত্মপ্রকাশ এবং ধীরে ধীরে তার নিজস্ব পরিচিতি গড়ে উঠতে থাকে।
অন্ধকার যুগ থেকে ধীরে ধীরে বের হয়ে আসার সাথে সাথে চিত্রকলা, সাহিত্য এবং উন্নত চিন্তাসমূহ গুরুত্ব পাওয়া শুরু করে। আর এ কারণেই মাত্র একশ’ বছরের মধ্যেই পরিবর্তনের বিশাল ঢেউ এসে গোটা ইউরোপের বৌদ্ধিক রূপান্তরকে নিয়ে যায় কল্পনারও সীমানা ছাড়িয়ে।
এই সময়ে সংস্কৃতির প্রায় সব শাখাতে জাগে নব জাগরণের ছোঁয়া। ভিঞ্চির জন্মের সময় ইউরোপে যেখানে মাত্র তিরিশ হাজারের মতো ছাপানো বই ছিল, সেখানে ১৫০০ সালে, ভিঞ্চির মধ্য বয়সে ছাপানো বইয়ের সংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় আট মিলিয়নে।
দুটো গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ইউরোপীয় সংস্কৃতিকে সামান্য কিছু সংখ্যক সন্ন্যাসী কর্তৃক কুক্ষিগত বিভ্রান্ত বৈজ্ঞানিক ধারণার পর্যায় থেকে লিওনার্দো, গ্যালিলিও, নিউটন এবং পরবর্তীতে শিল্প বিপ্লবের ভিত গড়ে তুলেছিল। প্রথমতঃ প্রাচীন পাণ্ডুলিপির সন্ধান যা রেঁনেসার পণ্ডিতদের সরাসরি চিরায়ত দর্শনের সাথে পরিচয় করিয়ে দিয়েছিল এবং দ্বিতীয়তঃ সমসাময়িক সময়ে স্থানান্তরযোগ্য মুদ্রণের আবিষ্কার।
চিরায়ত পাণ্ডুলিপি অনুসন্ধানের কাজের অনুপ্রেরক হিসাবে কাজ করেছিলেন মানবতাবাদী মনীষী ফ্রান্সেসকো পেট্রার্ক। পেট্রার্ক এর জন্ম ১৩০৪ সালে ফ্লোরেন্সের পঁঞ্চাশ মাইল দূরের এক ছোট্ট শহর আরেৎজোতে। অত্যন্ত অল্প বয়স থেকেই তিনি চিরায়ত সাহিত্যের প্রতি গভীরভাবে অনুরাগী ছিলেন।
চিত্র ৭: ফ্রান্সেসকো পেট্রার্ক (১৩০৪ – ১৩৭৪)
তার সময়ের সবচেয়ে বরেণ্য মনীষী পেট্রার্ক সমমনা কিছু সংখ্যক পণ্ডিত ব্যক্তিকে জড়ো করেন যাদের তার মতোই চিরায়ত ঐতিহ্যের প্রতি প্রবল ভালবাসা ছিল। তারা বিশ্বাস করতেন যে, ইউরোপের মঠগুলোতে মূল ল্যাটিন এবং গ্রীক ভাষার শত শত পাণ্ডুলিপি এবং দলিল দস্তাবেজ গোপন ব্যক্তিগত সংগ্রহে আছে। পেট্রার্ক এর সঙ্গী সাথীদের অনেকেই তাদের সারা জীবনের সাধনা হিসাবে নিয়েছিলেন সেগুলোকে উদ্ধার করার জন্য। পেট্রার্ক এর ঘনিষ্ঠ বন্ধু জিওভানি বোকাচিও ট্যাসিটাসের (Tacitus) লেখা Histories এবং Annales এর অংশবিশেষ খুঁজে বের করেন।
পরবর্তী প্রজন্মের পণ্ডিতেরা এই অনুসন্ধানের কাজকে এগিয়ে নিয়ে যেতে থাকেন এবং এর ফলশ্রুতিতে রোমান যুগের বেশ ব্যাপক সংখ্যক গ্রন্থ উদ্ধার করা হয়। নিকোলো নিকোলি এবং পোগিও ব্রাসিওলিনি পঞ্চদশ শতাব্দীর দ্বিতীয় দশকে আবিষ্কার করেন ম্যালিনাসের Astronomica, লুক্রিটিয়াসের De Rerum Natura, স্ট্যাটিটিয়াসের Silvae এবং কলুমেলার De Re Rustica সহ মাইনিং ও কৃষির উপর লেখা বেশ কিছু গ্রন্থ। এর কয়েক বছর পরে ব্রাসিওলিনি খুঁজে পান চ্যাসিও ফ্রন্টিনাসের On Aqueducts, যা রোমান স্থাপত্য কৌশলের ভিত্তি গড়ে দিয়েছিল। এই সময়ে খুঁজে পাওয়া আরো গ্রন্থগুলোর মধ্যে আছে ভিট্রুভিয়াসের স্থাপত্যবিদ্যার উপর কাজ এবং সেলসাসের চিকিৎসা বিষয়ক গ্রন্থসমূহ। ভিট্রুভিয়াস এবং সেলসাসের কাজ এই দুই বিষয়ে লিওনার্দোর অনেক ধারণার গঠনে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করেছিল।
এই সমস্ত গ্রন্থের উদ্ধারের সবচেয়ে তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়টি হচ্ছে গ্রন্থগুলো লেখা ছিল বিশুদ্ধ ল্যাটিনে এবং যতদূর সম্ভব অবিকৃত। কাজেই, চতুর্দশ শতাব্দীর শেষের দিকে এবং পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম দিকে ফ্লোরেন্সের অভিজাত শ্রেণী অর্ধ-শিক্ষিত সন্ন্যাসীদের কাঁচা অনুবাদ বাদ দিয়ে প্রথমবারের মত চিরায়ত যুগের মহান চিন্তাবিদদের লেখাসমূহ অবিকৃত অবস্থায় পড়ার সুযোগ পেলেন।
এক অর্থে এটাই ছিল বিরাট পাওয়া। কিন্তু এর চেয়েও গুরুত্বপূর্ণ ছিল অন্য একটা বিষয়। এই সমস্ত কাজ যখন অনুবাদ করা হলো এবং ব্যাখ্যা বিশ্লেষণ করা হলো তখন বিস্ময়ের সাথে দেখা গেল যে রোমান পণ্ডিতেরা বিজ্ঞান বিষয়ে যা কিছু বলেছেন তার ভিত্তি মূলতঃ আরো প্রাচীন সময়ের গ্রীকদের ধ্যানধারণা, বিশেষ করে খ্রীষ্টপূর্ব ৫০০ থেকে ২৫০ সালের গ্রীসের স্বর্ণযুগের চিন্তাবিদ আর্কিমিডিস, এরিস্টটল, পিথাগোরাস এবং প্লেটো।
এর ফলে বৈজ্ঞানিক জ্ঞানের মূল গ্রীক উৎসের সন্ধানের কাজ আরো গতিবান হয়ে উঠে। প্রাচীন জ্ঞানের তাৎপর্য উপলব্ধি করে ধনী ফ্লোরেন্সবাসীরা সেগুলোকে খুঁজে বের করা এবং কিনে আনার জন্য বিদেশে প্রতিনিধিও পাঠানো শুরু করেন।
এর আগ পর্যন্ত পশ্চিম ইউরোপে গ্রীক পাণ্ডুলিপি বলতে ছিল, ইউক্লিডের বেশ কিছু প্রবন্ধসহ প্লেটো এবং এরিস্টটলের সামান্য কিছু কাজ। তাও আবার সেগুলো ছিল সন্ন্যাসী বা ভক্তদের হাতে। যক্ষের ধনের মত সেগুলোকে লুকিয়ে রাখাই ছিল তাদের কাজ। পেট্রার্কের নিজের কাছেও হোমারের মূল পাণ্ডুলিপির একটি ছিল যার এক বিন্দুও তিনি পড়তে পারতেন না। হোমারকে বিরাট কবি হিসেবে মনে করতেন তিনি এবং প্রতিদিন ঘুমোবার আগে ওই পাণ্ডুলিপিতে চুমু খেয়ে তবেই বিছানায় যেতেন তিনি।
পঞ্চদশ শতাব্দীর প্রথম তিন দশকে মূলতঃ প্রাচ্য থেকে কয়েকশত মূল পাণ্ডুলিপি ফ্লোরেন্সে এসে পৌঁছায়। পশ্চিমা প্রতিনিধিরা তুর্কীদের কাছ থেকে পাণ্ডুলিপি কেনা শুরু করে। ফ্লোরেন্সের এক প্রতিনিধি জিওভানি অরিস্পা ১৪২৩ সালে একাই এক যাত্রায় ২৩৮টি সম্পূর্ণ পাণ্ডুলিপি নিয়ে আসেন।
এভাবেই ফ্লোরেন্সের মনীষীরা এরিস্টটলের Politics এর সম্পূর্ণ অংশ, হেরোডোটাসের ইতিহাসসমগ্র, প্লেটোর Dialogues, ইলিয়াড, অডিসি এবং সফোক্লিসের নাটকসমূহ, হিপোক্রেটস এবং গ্যালেনের চিকিৎসা বিষয়ক লেখালেখিসমূহের অধিকারি হয়ে উঠেন। এ’ ছাড়াও আরো কিছু সংখ্যক গ্রন্থ ছিল যে গুলো ইউরোপের রেঁনেসায় অবদান রেখেছে। এর মধ্যে অন্যতম হচ্ছে টলেমি এবং স্ট্রাবোর ভূ-বিদ্যা বিষয়ক গ্রন্থ সমূহ।
১৪০৬ সালে ফ্লোরেন্সের এক বণিক পালা স্ট্রোতসি টলেমির Geography ইটালীতে নিয়ে আসেন। এতে দূরত্ব পরিমাপের কৌশলসহ মানচিত্র অংকনের কলাকৌশল বিস্তারিতভাবে বর্ণনা করা ছিল। এই কলাকৌশল ইউরোপ তার অন্ধকার যুগে ভুলে গিয়েছিল পুরোপুরিভাবে।
গাদা গাদা প্রাচীন পাণ্ডুলিপি তাদের আসল ভাষায় জোগাড় হলো ঠিকই, কিন্তু সমস্যা দেখা দিল অন্য জায়গায়। দেখা গেল কেউ প্রাচীন গ্রীক ভাষায় কথা বলতে বা পড়তে পারে না। পেট্রার্ক এবং বোকাচিও অনেক আগেই এই ভাষা ফ্লোরেন্সের পণ্ডিতদের মধ্যে চালু করার চেষ্টা করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে একটি গ্রীক চেয়ার খোলার তাদের চেষ্টা ব্যর্থতায় পর্যবসিত হয়েছিল। দুই প্রজন্ম পরে বিপুল সংখ্যক পাণ্ডুলিপির অধিকারি হয়ে এর অধিকর্তা ধনাঢ্য ব্যক্তিরা অবশেষে বিশ্ববিদ্যালয়ে গ্রীক চেয়ার প্রতিষ্ঠিত করেন। এবং অচিরেই তাতে বহাল হন বিখ্যাত পণ্ডিত কন্সট্যান্টিনোপলের ইমানুয়েল ক্রাইসোলোরাস।
ক্রমবর্ধমান গ্রীক পাণ্ডুলিপির নিখুঁত অনুবাদ বিস্ময়কর উপলব্ধি হয়ে এলো ফ্লোরেন্সবাসীদের জন্য। এ পর্যন্ত সাংস্কৃতিকভাবে তারা যা কিছু অর্জন করেছে তার থেকে অনেক অনেক গুণ বেশি এগিয়ে ছিল গ্রীসের লোকজন প্রায় দুই হাজার বছর আগে। বিস্ময়কর এই আঘাত ফ্লোরেন্সবাসীদেরকে চরম হতাশায় আত্মধ্বংসের দিকে না নিয়ে বরং বড় ধরনের অনুপ্রেরণার উৎস হিসাবে কাজ করেছিল। এই অনুপ্রেরণায় অনুপ্রাণিত হয়ে তারা গ্রীকদের অনুকরণ করা শুরু করে এবং কোন কোন থেকে সেগুলো উন্নততর করারও সাহস দেখায়।
মধ্যযুগের ইউরোপ যেখানে ছিল রোগ-শোক এবং যুদ্ধবিগ্রহের আখড়াভূমি, নতুন কোন আবিষ্কারের জন্য একেবারে বন্ধ্যা ক্ষেত্র। সেখানে রেঁনেসা ছিল একেবারেই মুদ্রার অপর পিঠ। সাগ্রহে অংশ নেওয়ার সময়, নতুন নতুন আবিষ্কারের নেশায় কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ার সময়। নিজেদের সামর্থ্য কী সে সম্পর্কে সচেতনতা এবং সভ্যতা যা অর্জন করেছে তার চেয়েও বেশী করার সামর্থ্য রাখে এই বিশ্বাসই নাড়িয়ে দিয়েছিল ইউরোপকে। এর ফলশ্রুতিতেই শুরু হয় নতুন নতুন আবিষ্কার এবং আধুনিক বৈজ্ঞানিক চিন্তার সূত্রপাত। সেই সাথে শৈল্পিক উৎকর্ষের জন্য তৈরি হয় উর্বর ক্ষেত্র।
(চলবে)
মায়ামি, ফ্লোরিডা। [email protected]
===============================================
মুক্তমনার মডারেটর, 'মহাবিশ্বে প্রাণ ও বুদ্ধিমত্তার খোঁজে' গ্রন্থের লেখক।