লুনা শিরীনের অনুভূতি ও জেবতিকের ভিন্নমত
আরিফ জেবতিক

অনুজতূল্য তরুন লেখক অমিত আহমেদ এর মেইল মারফত জানতে পেরেছি যে মুক্তমনায় আমার একটি লেখা প্রকাশিত হয়েছে।মুক্তমনায় লেখা প্রকাশিত হওয়ার বিষয়টি আমার মতো তুচ্ছ লেখকদের জন্য একটা ভালো লাগার বিষয়, তাই মুক্তমনার মডারেটরদেরকে আমার কৃতজ্ঞতা। ধন্যবাদ অভিজিৎ যিনি লেখাটি আমার সচলায়তন ব্লগ থেকে  মুক্তমনাতে নিয়ে আসার কষ্টটুকু করেছেন।

লেখাটি প্রকাশিত হওয়ার পরে লুনা শিরীন সেই লেখাটি পড়েছেন এবং একটি প্রতিক্রিয়া প্রকাশ করেছেন

লুনা শিরীন নামটির সাথে আমি পরিচিত, কিন্ত দূ:খের বিষয় আমার মতো তুচ্ছ মানুষের নামটি তার কাছে পরিচিত নয়। নয়তো তার হুটহাট বাংলা সাইটে চলে যাওয়ার সুঅভ্যাসের কারনে হয়তো আমার নামটি তার চোখে পড়তো কখনো সখনো।

সেক্ষেত্রে তিনি যে রূঢ় কথাগুলো বলেছেন,সেটি বলার কষ্ট করতেন না।

তার অবগতির জন্যে বিনীত ভাবে জানাই আমি বাংলাদেশেরই ভাত খাই। কষ্ট করে খাই,বিভিন্ন মানসিক যন্ত্রনার মাঝে অষ্টপ্রহর বাস করে খাই সেটা ঠিক,  তবে এই ঢাকা শহরেই আমি দীর্ঘদিন এভাবেই কাজকর্ম করে খেয়ে আসছি।

আর আমি মানুষটা তুচ্ছ হতে পারি,কিন্ত একসময় টানা  ৬ বছর ভোরের কাগজে সাংবাদিকতা করার কারনে ,সামান্য লেখালেখির বদঅভ্যাসের কারনে,এব প্রকাশিত একটি ফালতু বইয়ের কারনে আমার নামটা কিছু কিছু মানুষের কাছে পরিচিত এবং আমাকে ঢাকা শহরে খুজে বের করা খুব কষ্টকর বিষয় নয়।চাইলেই যে কেউ  আমাকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আশপাশ বা শাহবাগ এলাকা থেকে যেকোন সন্ধ্যায় তুলে নিতে পারবেন, যে কোন সংবাদপত্র অফিসে একটু খোঁজ নিলেই আমার অনেক শূভানূধ্যায়ী প্ওায়া যাবে যারা সানন্দে আমার জন্মঠিকুজি পর্যন্ত যে কোন ব্যক্তি বা এজেন্সীকে নিজ খরচে পৌছে দিয়ে আসবেন। বুকের জোরটা আমার জন্মগত,লুন শিরীনের ভাষ্যমতো ‘বিদেশের মাটিতে গিয়ে বুকের জোর বাড়ানোর’ কোন প্রয়োজন এখনও আমার পড়ে নি।  

আর বাংলাদেশে যে জীবনের হিসেব এতো সোজা না সেটি তিনি প্রবাসে বসে স্মরণ না করিয়ে দিলেও পারেন, কারন সেটা আমার মতো বাংলাদেশী মধ্যবিত্তকে প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নিজ স্বার্থেই স্মরণ রাখতে হয়। 

লুনা শিরীন আমার লেখাটি পড়েছেন,কিন্তু ছোট্ট এই লেখাটি মনদিয়ে পড়তে পারেন নি ।নয়তো তিনি প্রশ্ন করে বসতেন না,আমি কখনো মতি ভাইয়ের সাথে কাজ করেছি কি না? পুরো লেখাটিতে স্পষ্ঠ করে লেখা হয়েছে যে আমি ‘আলপিন’এর জন্মলগ্ন থেকেই সেখানে ছিলাম।আলপিন যদি প্রথম আলো সাপ্লিমেন্ট হয়,আর মতিউর রহমান যদি সেই প্রথম আলো’র সম্পাদক হয়ে থাকেন তাহলে আমি যে তার সাথে কাজ করেছি সেটা যে কোন পাঠকের জন্যই সহজবোধ্য বলে আশা করি। 

‘ইচ্ছে হলো বাংলা টাইপ করে মেইল করে দিলেন’ বলে তিনি আমাকে যে ইঙিত দিয়েছেন তার প্রসঙ্গে আমি বিনীতভাবে জানাই, আমি যা বলতে চাই তা আমার ইচ্ছে মাফিকই বলি,অন্যের ইচ্ছে মাফিক বলার কায়দাটা অধ্যাবধি রপ্ত করতে পারিনি। আ্ওয়ামী লীগ আমলে শেখ হাসিনার বেয়াইকে রাজাকার বলে ভোরের কাগজে একটা লেখার কারনে এবং আরেকবার শেখ হাসিনার ফুপাকে রাষ্ট্রদূত করার প্রতিবাদ করে লেখায় ,প্রকাশক মন্ত্রী মহোদয় আমার চাকুরিখানা খ্ওায়ার জোর ইচ্ছা প্রকাশ করেছিলেন ,তবু ভাত কাপড়ের লোভে আমার কলাম ‘মাইক্রোস্কোপ’ এ ইচ্ছেহীন কোন লেখা লিখি নি বলেই পাঠকরা স্বাক্ষী দেবেন।আমি গভীর কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করি আমার সম্পাদক বেনজির আহমেদকে,যিনি সকল বিপর্যয়ে মালিক পক্ষের চোখ রাঙানির বিপরীতে আমাদের মতো তরুন লেখকদের বুক দিয়ে আগলে রেখেছিলেন,মতি ভাইয়ের মতো রাস্তায় ফেলে দেন নি। (অবশ্য শেষ পর্যায়ে আমার বা উনার কারোই আর ভোরের কাগজে থাক সম্ভব হয় নি।) 

খুবই কষ্ট পেয়েছি এবং প্রতিবাদ জানাচ্ছি লুনা শিরীনের একটি কথার ।তিনি বলেছেন,‘ দেশে এখন সব শালারাই নাকি মতি ভাইয়ের মতো বিপ্লবী।’ দেশের মানুষদের প্রতি এই অবহেলা,অবিশ্বাস,তাদেরকে তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করার এই মানসিকতা নিয়ে আমার বলার কিছু নেই। এটা একটা সামগ্রিক অবস্থান,আমি প্রায়ই দেখি এয়ারপোর্ট থেকে বেরুতে বেরুতে আমার দেশের কিছু সাবেক নাগরিক বড়ো বেশি ভুরু কুচকে এই দেশের প্রতি তাকান। দেশের প্রতি তাদের মমতা নেই,ভালোবাসা নেই,আছে শুধু তুচ্ছ তাচ্ছিল্য;আছে করুণা।দেশের কিছুই তাদের ভালো লাগে না।আমি সেই শেকড়হীন মানুষদের সম্মন্ধে কিছু বলার প্রয়োজন দেখছি না,তাদের জন্যও করূণা ছাড়া আমার কিছু নেই। 

তবে আমরা যারা দেশের ভেতরে বাস করি,আমরা যারা ৭১ এর উত্তরাধিকার বহন করি,আমরা যারা ৯০ কে সৃষ্ঠি করেছিলাম তারা জানি দেশের মানুষের উপর আস্থা হারানো পাপ। 

আমার রিক্সাওয়ালার,আমার কৃষকের,আমার হকার-দিনমজুর-খেটে খাওয়া মানুষের পক্ষে বিদেশ গিয়ে  তত্বকথা আলোচনার সুযোগ নেই।তারা কোন উন্নত দেশের ইমিগ্রেশনকে সালাম জানিয়ে নাগরিকত্ব বাতিল হবে না বলে আত্মপ্রসাদে ভুগে না। তাদেরকে এখানেই থাকতে হয়,থাকতে হবে;আর তাই সকল চোখ রাঙানিকে উপেক্ষা করে তারা সময় হলেই জ্বলে উঠে।  

২২ আগস্টের ঘটনায় সেই ফুসে ওঠার একটি চিহ্ন দেখা গেছে।এর একটি স্থূল উদাহরন হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে যে,মিরপুর রোডের বিক্ষোভের পরেই  হকারদেরকে আবার ফুটপাতে ব্যবসা করার অনুমতি দিয়েছে সরকার।

দেশে এখনও সবাই মতি ভাইয়ের মতো বিপ্লবী নয়।সবাই এখনও  কানাডার ইমিগ্রেশনকে সালাম জানিয়ে নেটনামচা লিখে উপদেশ বিলায় না। 

তাদের কেউ কেউ লাথি গুতা খেয়েও নিজ নিজ বুকের জোর নিয়ে এই দেশে থেকে কথা বলে যায়।

দেশের অগনিত লড়াকু মানুষের প্রতি এই আস্থাটুকু পাঠকরা রাখবেন বলেই আশা করি।