বাংলা ব্লগ

বিবর্তনের আর্কাইভ

বিবর্তন ব্লগ

মুক্তমনা কি?

প্রজেক্ট

ইবই

সাহায্য


  ভ্রান্ত ধারণা

চার্লস ডারউইন চোখের বিবর্তন নিয়ে সন্দেহ পোষণ করেছিলেন

 

) দাবীটি ভুল।  চোখ সম্বন্ধে ডারউইনের সম্পূর্ণ উক্তিটি ছিল এরকম[1]

  

চোখের আছে কিছু অনুকরণীয় উপকরণ, যা দিয়ে এটি বিভিন্ন দূরত্বের সাথে ফোকাস করতে পারে, বিভিন্ন মাত্রার আলো এর ভিতরে ঢুকতে দিতে পারে, এবং গোলাকার  ও বর্ণীয় অপেরণকে সংশোধন করতে পারে, সেটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভূত হয়েছে মনে করা হয়ত অসম্ভব ব্যাপার বলেই মনে হতে পারে। তবুও যুক্তি আমাকে বলে যে, যদি অত্যন্ত অসম্পূর্ণ ও সরল চোখ থেকে নিখুঁত ও জটিল চোখ পর্যন্ত অনেক কয়েকটি স্তর থেকে থাকে এবং প্রতিটি স্তর তার ধারকের জন্য উপকারী হয় বলে দেখানো যায়; আর যদি চোখগুলো সামান্য পরিমাণেও পরিবর্তনশীল হয়, এবং বিভিন্নতাগুলো বংশানুসৃত হয় (যা অবশ্যই সম্ভব), আর যদি অঙ্গের বিভিন্নতাগুলো বা পরিবর্তনগুলো জীবনের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে প্রাণীর জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়, তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে নিখুঁত ও জটিল চোখের উদ্ভব যতই অবাস্তব শোনাক না কেননা ঘটার কোন কারণ নেই।

 

 

সৃষ্টিবাদীরা কেবল ‘...অসম্ভব ব্যাপার বলেই মনে হতে পারে’ পর্যন্ত খণ্ডিত অংশ উদ্ধৃত করে থাকেন এরকম ভাবে –

 

‘চোখের আছে কিছু অনুকরণীয় উপকরণ, যা দিয়ে এটি বিভিন্ন দূরত্বের সাথে ফোকাস করতে পারে, বিভিন্ন মাত্রার আলো এর ভিতরে ঢুকতে দিতে পারে, এবং গোলাকার  ও বর্ণীয় অপেরণকে সংশোধন করতে পারে, সেটি প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে উদ্ভূত হয়েছে মনে করা হয়ত অসম্ভব ব্যাপার বলেই মনে হতে পারে।‘

 

অথচ ডারউইন, সৃষ্টিবাদীদের উদ্ধৃত করা অংশের নীচের লাইনেই নিজেই চোখের বিবর্তনীয় উপযোগিতার কথা বলে গেছেন খুব স্পষ্ট ভাবে এভাবে[2]

 

‘...পরিবর্তনগুলো জীবনের পরিবর্তনশীল পরিস্থিতিতে প্রাণীর জন্য উপকারী বলে বিবেচিত হয়, তাহলে প্রাকৃতিক নির্বাচনের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে নিখুঁত ও জটিল চোখের উদ্ভব যতই অবাস্তব শোনাক না কেননা ঘটার কোন কারণ নেই’।

 

 

২) ডারউইন এর পর তিন পৃষ্ঠা ধরে চোখ-বিহীন অবস্থা থেকে শুরু করে আমাদের জটিল চোখের  পূর্ণ অবয়ব-প্রাপ্তি পর্যন্ত বিভিন্ন ধাপ বর্ণনা করেছেন প্রকৃতিজগতের নানা উদাহরণ টেনে এনে[3]।  

 

৩) যদি ডারউইন চোখের উদ্ভব সম্বন্ধে ভুল কথা বলতেন তাতেও কোন সমস্যা ছিলো না। বিবর্তনের অভিযাত্রা কেবল ডারউইনের কোন নির্দিষ্ট উক্তিতে সীমাবদ্ধ নয়। বিজ্ঞানের অন্য অনেক শাখার মত বিবর্তন বিজ্ঞানও কাজ করে পরীক্ষা-নিরীক্ষা এবং পর্যবেক্ষণে।  ডারউইনের মৃত্যুর পর এ শাখায় গবেষণারত বিজ্ঞানীরা এ নিয়ে অনেক কাজ করেছেন এবং আজকের দিনের জীববিজ্ঞানীরা পর্যাপ্ত তথ্যের ভিত্তিতে প্রাকৃতিক নিয়মে চোখের বিবর্তনের ধাপগুলো সম্বন্ধে পুরোপুরি নিশ্চিত হয়েছেন[4]

 

 

প্রাসঙ্গিক দাবী

চোখের মত জটিল অঙ্গ বিবর্তনের মাধ্যমে তৈরি হতে পারে না


 

[1] C. Darwin, 1872. The Origin of Species, 6th ed. London: Senate,
ভাষান্তর, ড ম আখতারুজ্জামান, প্রজাতির উপত্তি, হাসান বুক হাইউজ, ২০০০

[2] বন্যা আহমেদ, বিবর্তনের পথ ধরে, অবসর, ২০০৭ (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত ২০০৮)

[3] Mark Isaak, The Counter-Creationism Handbook, University of California Press, 2007.

[4] বন্যা আহমেদ, বিবর্তনের পথ ধরে, অবসর, ২০০৭ (পরিমার্জিত ও পরিবর্ধিত ২০০৮)

প্রশ্নোত্তরে বিবর্তন