নাস্তিকতা নিয়ে কিছু ভুল ধারনা -২
মূলঃ স্যাম হ্যারিস
অনুবাদঃ দিগন্ত সরকার৮) নাস্তিকেরা মনে করে মানবজীবন আর মানুষের চিন্তার বাইরে কিছুই থাকতে পারে না
নাস্তিকেদের পক্ষে মানুষের চিন্তাভাবনার সীমাবদ্ধতা নিয়ে ধারণা করা আস্তিকদের তুলনায় সহজ। এটা সত্যি যে আমরা মহাবিশ্বের অনেককিছুই জানি না এবং তার সাথে এটাও সত্যি যে ধর্মগ্রন্থের পাতায় যে মত পাওয়া যায় তাও আমাদের ধারণার প্রতিফলন নয়। যেমন আমরা এখনো জানি না যে আমরা ছাড়া কোনো বুদ্ধিমান প্রাণী মহাবিশ্বে আছে কি না। আর যদি থেকেও থাকে, প্রকৃতি সম্পর্কে তাদের ধারণা আমাদের থেকে কয়েকগুণ বেশীও হতে পারে। নাস্তিকদের পক্ষে এরকম মেনে নেওয়া সম্ভব। আর সেই বুদ্ধিমান প্রাণীদের কাছে যে আমাদের ধর্মমগ্রন্থগুলো আরো অর্থহীন মনে হবে সেটাও নাস্তিকরা মেনে নেবেন। আসলে মহাবিশ্বের ব্যাপকতা আর রহস্যময়তা সম্পর্কে পৃথিবীর প্রচলিত ধর্মগুলো নিতান্তই সাধারণ ব্যাখ্যা দিতে পেরেছে। পর্যবেক্ষণ ছাড়া সেই সব মেনে নেবার কোনো অর্থই হয় না।
৯) ধর্ম যে সমাজের উপকারে আসে, সেটা নাস্তিকেরা উপেক্ষা করেন
সমাজে ধর্মের উপকারী প্রভাব নিয়ে যারা আলোচনা করেন তাদের মনে রাখা উচিত যে শুধুমাত্র উপকারী প্রভাবের কারণে কোনো কিছুকে সত্যি বলে মেনে নেওয়া যায় না। এই একই কারণে সব সান্ত্বনাবাক্যই সত্যি নয় যদিও তা উপকারে আসে।
শুধু তাই নয়, ধর্মের উপকারী প্রভাবও প্রশ্নাতীত নয়। অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ম মানুষকে ঠিক পথে চলার জন্য ভুল ব্যাখ্যা দেয়, যেখানে সঠিক কারণ দেওয়া সম্ভব। কোনো গরিব বা দুঃস্থকে কি কারণে সাহায্য করা উচিত? তার সাথে সমব্যাথী বলে? না মহাবিশ্বের স্রষ্টা সাহায্যকারীকে পুরষ্কৃত করেন বলে?
১০) নাস্তিকতা বিবেক বা নীতির ধার ধারে না
কেউ যদি আগে থেকেই নিষ্ঠুরতা সম্পর্কে খারাপ ধারণা না রাখে, তাহলে তার পক্ষে কোনো ধর্মগ্রন্থ থেকে সেই ধারণা পাওয়া সম্ভব না। কারণ ধর্মগ্রন্থে মানুষ ও ঈশ্বরের অসংখ্য নিষ্ঠুরতার নমুনা রয়েছে। আমাদের মানবিক গুণাবলী ধর্মগ্রন্থ পড়ে আসে না। আমাদের মানবিক গুণাবলী অনেকাংশেই আমাদের মস্তিষ্কে প্রোথিত থাকে আর তা হাজার হাজার বছর ধরে মানুষের সুখ-দুঃখের কারণ বিশ্লেষণে সমৃদ্ধ হয়ে চলেছে।
গত কয়েক শতকে আমরা অনেক বিবেকবান হয়েছি কোনো ধর্মগ্রন্থ আলাদা করে আবিষ্কার না করেই। অধিকাংশ ধর্মগ্রন্থেই দাসপ্রথার উদাহরণ থাকলেও গত কয়েক শতকে আমরা তা আমাদের সমাজ থেকে নির্মূল করতে পেরেছি। ধর্মের যা যা ভাল দিক সবই আমাদের কাছে নীতিগতভাবে মূল্যবাণ কিন্তু তার মানে এই নয় যে তা কোনো মহাবিশ্বের স্রষ্টা আমাদের হাতে দিয়ে গেছেন।
জুন ০৪, ২০০৭
[email protected]
দিগন্ত সরকার, কম্পিউটার প্রকৌশলী এবং বিজ্ঞান লেখক। লেখাটি আমাদের মুক্তমনার পরবর্তী বই -‘বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়?’– প্রকাশিতব্য সংকলন-গ্রন্থের জন্য নির্বাচিত হল - মুক্তমনা সম্পাদক।