বাসুনকে, মা
লুনা শীরিন
পর্ব ৯
বাসুন,
টরোন্টোতে কি হঠাৎ করেই শীত নেমে আসবে নাকি রে? ঝকঝকে রোদের দিনগুলো থেকে ঝুপ করেই গত দুদিন টানা গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি পড়ছে, সেই সাথে শীত । আবার হয়তো তাড়াতাড়ি চলে আসবে মন খারাপ করা সেই বরফের দিনগুলো । গত দুসপ্তাহ যে আমার কি হয়েছে বাবু নিজের কাজগুলো কিছুতেই করতে পারছি না। বলতে পারিস তেমন কোন কাজই করা হয়নি, অথচ এখনো অনেকটা পথ যেতে হবে আমাকে। এভাবে আমার দিন যাবে না রে সোনা। অন্তত ভাবনাহীন জীবন যে আমার জন্য নয়, এতো জলের মতো সত্য । মাঝে আমার ছোট একটা চাকরি হয়েছে, তাই না রে সোনা? তোর মনে পড়ে, তোকে যে আমি ম্যাক এর বার্গার খাইয়ে আনলাম সেই দিনটাতে। কে আছে আমার আর বল ? তোর সাথেই তো আমার সব আনন্দ, তাই না? আমাদের অনেকদিনের স্বপ্ন আমার চাকরি হবে, তুই আর আমি মিলে ছোট একটা গাড়ি কিনবো। এখনতো ড্রাইভিং লাইসেন্সও হয়েছে, শুধু আর একটু অপেক্ষা সোনা। তারপর তুই আর আমি মিলে এই দেশটাকে চষে ফেলবো।
আজ দুপুরে বসে বসে এই মুক্তমনায় প্রকাশিত ফরিদ আহমেদ এর একটি লেখা পড়ছিলাম। উনি একটি লেখাতে লিখেছেন ,” আশার আলো নাকি শেষ পযন্ত জ্বলতেই থাকে”। আসলেই কি তাই সোনা? এই তোকে নিয়ে কতটা পথ হাটলাম আমি বল? প্রতিটা ঘন্টা, মিনিট আর দিনকে যদি হিসেব করি তাহলে প্রাপ্তির চেয়ে কি কষ্টের পাল্লাই বেশি ভারি হবে না ? আমার মন ভালো নেই সোনা। অনেকগুলো ভালো খবরের ভিতর কেমন করে যেন দুঃখের স্রোত ঢুকে পড়ে। কয়েকদিন হলো দেশের খবর আমাকে বিচলিত করছে। স্বার্থপরের মতো সমস্যাকে পাশ কাটাবার জন্য দেশ ছেড়েছি, কিন্তু অতীত আমার পিছু ছাড়েনি । দেশে বন্যায় যেমন মানুষ অবর্ননীয় কষ্ট পাচ্ছে তেমনি আবার শুরু হয়েছে রাজনীতির সেই সাপলুডু খেলা । একটি অনির্বাছত সরকার কেন দেশের ভিতর অস্থিরতা তৈরী করবে? তাদের ভবিষৎ পরিকল্পনা কি? কেন তারা যা ইচ্ছে তাই করার সাহস পাচ্ছে? কে তাদের মদদ যোগাচ্ছে? ইত্যাদি প্রশ্নগলো সবার মুখে মুখে। কোথায় আশার আলো? ফরিদ আহমেদকে পেলে জানতে চাইতাম দেশের এই ক্রান্তিকালে কি শুধু সমস্যা বিশ্লেষনই আপনাদের কাজ, নাকি আরো কিছু করনীয় ছিলো?
গতকাল পত্রিকায় দেখলাম ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ষ্টুডেন্টদের সেনাবাহিনী পিটিয়েছে। দেশের প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছড়িয়ে পড়েছে দাবানল। কে এই সরকারকে সাহস দিয়েছে ক্ষমতা প্রর্দশন করার? ভালো করতে গিয়ে এই নোংরা চেহারা বের করার মতো শক্তি কে দিলো তত্বাবধায়ক সরকারকে? এখন মনে হচেছ সেই পুরোন কথা, দুষ্ট গরুর চেয়ে শুন্য গোয়াল ভালো ।
একটু আগে ঢাকায় ফোন করেছিলাম, তোর নানু আপুর শরীরটা ভালো নেই বাবু। একদিন এই আমার মা আমাকে ধারন করেছিলো বলেই আজ পৃথিবীর আলো দেখতে পাচ্ছি আমি। অথচ জন্মের দায় শোধ করছি না। কেন মায়ের পাশে থাকতে পারছি না, কেন মনটা এতখানি ভার হয়ে আছে। কেন বার বার মনে হচ্ছে জীবনের সব আয়োজন বুঝি ক্ষনিকের । বাবু, তোর দেবশিশুর মতো মুখটা দেখতে পাচ্ছি। চারপাশে রাতের গভীরতা বাড়ছে, কিন্তু শুরু করতে হবে আরো একটি দিন । তোকে নিয়ে এই পথচলাতে আমি খুজে পাবো আলোর নিশানা, এই বিশ্বাসই আমাকে শক্তি ও শান্তি দেয়। আদর বাসুন, তোকে অনেক আদর ।
তোর মা, ২১ অগাষ্ট , ২০০৭
টরন্টো, কানাডা। Email:[email protected]