বিজ্ঞানমনস্ক ধারা ধর্মাচ্ছন্ন স্রোতে
(পর্ব-৪)
বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা, ধর্মের অপ্রয়োজনীয়তা
ধর্ম্ম সাধারণ লোকের কালচার, আর কালচার শিক্ষিত, মার্জ্জিত লোকের ধর্ম্ম
- মোতাহার হোসেন চৌধুরী(১৯)
ধর্মের প্রভাব
ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা আর ধর্ম-নির্দেশিত পাপ-পূণ্যের ধারণার মধ্যে ধর্মাচ্ছন্নরা কোন পার্থক্য খুঁজে পান না। বিবেক-বুদ্ধির চেয়ে ধর্মের অনুশাসনের ওপরেই এদের আস্থা বেশী। এদের অনেকেই মনে করেন, বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণ এবং আবিষ্কার সত্যি হলেও ধর্মের প্রয়োজন আছে। আছে কি? একটু পরে এই প্রশ্নটা নিয়ে আবার আলোচনায় আসবো। এখন শুধু বলে রাখি, ধর্ম শুধু বিজ্ঞানের প্রতিপক্ষ হিসেবেই ব্যর্থ নয়, মানুষের নৈতিক, সাংস্কৃতিক, সামাজিক, এবং আধ্যাত্মিক প্রয়োজন মেটাতেও শোচনীয়ভাবে ব্যর্থ।
ধর্মীয় আচার-আচরণ ও ধ্যান-ধারণার অসারতা নিয়ে যত কথাই বলা হোকনা কেন, প্রকৃত অবস্থা হচ্ছে ধর্ম আছে আমাদের চারপাশে, এবং আছে ব্যাপকভাবেই। সমাজে ধর্মের সর্বব্যাপী প্রভাবকে অস্বীকার করার কোন উপায় নাই। ধর্মাচ্ছন্ন মানুষের সংখ্যা বিজ্ঞানমনস্ক মানুষের চেয়ে ঢের বেশী। এদের অনেকের কাছেই ধর্মের এবং সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসের প্রয়োজন অনস্বীকার্য। কথায় কথায় ‘ইনশাল্লা,’ ‘গড উইলিং,’ ‘সবই হরির ইচ্ছা’ শুনতে আমরা অভ্যস্ত। পৃথিবীর আপামর মানুষের খাদ্যসমস্যার সমাধান না হলেও নিত্য-নতুন মসজিদ-মন্দির-গীর্জা-সিনাগগ-টেম্পল তৈরীর কমতি নাই। চ্যারিটির টাকাপয়সার সিংহভাগ ব্যয়িত হয় এসবের পেছনেই। স্কুল-কলেজ-হাসপাতালে নয়, মসজিদ-মাদ্রাসা-দরগাতেই মানুষ দান-খয়রাত করতে পছন্দ করে বেশী। সাপ্তাহিক ‘টাইম’ ম্যাগাজিনের একটা প্রতিবেদনে জানা যায় আমেরিকায় পরলোকে এবং ঈশ্বরে বিশ্বাসীদের সংখ্যা মোটেও কমেনি, যদিও অনেকেই জানেনা তারা আসলে কিসে বিশ্বাস করে।(২০)
এখনো শোনা যায় দায়িত্বশীল মানুষের মুখ থেকে, ‘আল্লা আমাদের পরীক্ষা করছেন,’ ‘আল্লার মাল আল্লায় নিয়েছেন’ ধরণের কথাবার্তা। মহাত্মা গান্ধীও এলাহাবাদ ভুমিকম্পের (১৯৩৪) পরে বলেছিলেন ঈশ্বর আমাদের শাস্তি দিচ্ছেন। (২১)
ধর্মের নামে ১৯৪৭-এ সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার ফলে লক্ষ লক্ষ মানুষের জীবনহানির মধ্য দিয়ে ভারত বিভক্ত হয়। এরই ধারাবাহিকতায় আবারও ১৯৭১-এ আরো কয়েক লক্ষ মানুষের জীবনদানের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ রাষ্ট্রের প্রতিষ্ঠা হয়। ধর্মের নামেই আজো মধ্যপ্রাচ্যে (প্যালেস্টাইনে, ইরাকে) চলছে অন্যায় জবরদখল, সন্ত্রাসের তান্ডব, মানুষ হত্যার উৎসব। পৃথিবীর ইতিহাসে ধর্মীয় ভাবধারার উদ্ভব থেকে আজ পর্যন্ত অশান্তি, হানাহানি, খুনোখুনির মূল কারণ অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ধর্ম। ঠান্ডা মাথায় চিন্তা করলে একে সঙ্গবদ্ধ পাগলামী (collective madness) ছাড়া আর কি বলা যায়?
আহমদ শরীফ, আরজ আলী মাতুব্বরদের সংখ্যা হাতে গোনা যায়; ধর্মাচ্ছন্ন মানুষের ভীড়ে বিজ্ঞানমনস্ক মানুষেরা জ্ঞানের আলোয় উদ্ভাসিত হয়ে অন্ধকার আকাশে উজ্জ্বল নক্ষত্রের মতো দেদীপ্যমান, কিন্তু তাদের সংখ্যা এখনও তেমন বেশী নয়।
বিজ্ঞানের আওতা
এখনো অনেক কিছুই রয়ে গেছে আমাদের অজানা, সৃষ্টি-রহস্যের অনেক কিছুই এখনো রয়ে গেছে আমাদের ধরা-ছোঁয়ার বাইরে। কিন্তু যতটুকুই জেনেছি, তার সবই বিজ্ঞানের মাধ্যমে, বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা-নিরীক্ষা আর পর্যবেক্ষণের ফলে। রাসেল বলেছেন, “জ্ঞান যতটুকুই অর্জন করা যায়, অর্জন করতে হবে বৈজ্ঞানিক পদ্ধতির মাধ্যমে; আর বিজ্ঞান যা আবিষ্কার করতে পারে না, মানুষের পক্ষে তা জানা সম্ভব নয়”।(২২)
ধর্মবাদীদের মুখে একটা কথা প্রায়ই শোনা যায়, ‘নৈতিকতা, মুল্যবোধ, ন্যায়-অন্যায় জ্ঞান (এথিক্স) বিজ্ঞান দিতে পারেনা। তাই ধর্মের প্রয়োজন আছে’। যেন ধর্মই আমাদেরকে চুরি-চামারি, খুন-খারাবি, অত্যাচার-ব্যাভিচার এবং যাবতীয় অন্যায় কাজ করা থেকে নিবৃত্ত রাখতে পারে। কিন্তু আমাদের অভিজ্ঞতা তো বলে অন্য কথা। যে বাংলাদেশের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু, সে দেশে দুর্নীতির ব্যপকতা; আর যে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের বেশির ভাগ মানুষ সৃষ্টকর্তার অস্তিত্বে বিশ্বাসী, সে দেশে ধর্মবিরোধী অবাধ যৌন-অনাচার, ধর্মীয় অনুশাসন যে খুব একটা কার্যকর নয় তাই প্রমাণ করে। আমেরিকায় ইদানীংকালে খোদ ক্যাথলিক ধর্মযাজকদের মধ্যে যৌন-অনাচারের প্রাদূর্ভাব এ প্রসঙ্গে উল্লেখযোগ্য।
ধর্মের মতো বিজ্ঞানে সব প্রশ্নের উত্তর খুঁজতে যাওয়াটাই বোকামি। আসলে বিজ্ঞানমনস্করা তা করেও না। কারণ, বিজ্ঞান ধর্মের মতো দুনিয়ার সব প্রশ্নের উদ্ভট, মনগড়া উত্তর দেয় না। ধর্মবাদীরাই বিজ্ঞানকে ধর্মের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাড় করিয়ে দিয়ে বলে, বিজ্ঞান মূল্যবোধ, নৈতিকতা, ‘এথিক্স’, ন্যায়-অন্যায় সংক্রান্ত প্রশ্নের উত্তর দিতে পারেনা। ‘তাই বিজ্ঞানকে মেনে নিলেও ধর্মকে বাদ দেয়া যায় না; ধর্ম মানুষকে নীতিবোধ, মূল্যবোধ শিক্ষা দেয়, বিজ্ঞান কি দিতে পারে?’, ধর্মাচ্ছন্নরা বলবে। কিন্তু একথা না বুঝে যে বিজ্ঞানের কাজ মানুষকে নীতিবোধ, মূল্যবোধ, ন্যায়-অন্যায় জ্ঞান দেয়া নয়, শুধু এবং শুধুমাত্র সত্যের অনুসন্ধান করা।
বিজ্ঞানের সীমাবদ্ধতা বিজ্ঞানের সংজ্ঞার মধ্যেই নিহিত। বিজ্ঞান সাক্ষ্য-প্রমান ছাড়া কোনকিছুকেই সত্য বলে মেনে নিতে পারেনা। বিজ্ঞান কোন আদর্শ, মতবাদ, কিংবা বিশ্বাসব্যবস্থা (belief-system বা creed) নয়। ন্যায়-অন্যায়ের সংজ্ঞা, পাপ-পূণ্যের পার্থক্য বিজ্ঞানে পাওয়ার কথা নয়। প্রশ্ন উঠতে পারে, তাহলে কি মানুষের ন্যায়-অন্যায়, নীতিবোধ, মূল্যবোধ নিয়ে চিন্তা করার কোন দরকারই নাই? অবশ্যই আছে, তবে তা বিজ্ঞানের আওতায় আসেনা।
বিজ্ঞানের কাজ নয় মানুষকে বলা, “সদা সত্য কথা বলিবে”। কিন্তু সত্য বলাটা যে, মানুষের জন্য স্বাভাবিক, মিথ্যাটা যে সহজাত নয়, বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণে তা প্রমাণিত হতে পারে। অপরাধপ্রবনতা কোন জাতিগোষ্ঠীর মধ্যে বংশানুক্রমে পাওয়া জন্মগত স্বভাব কি না, কিংবা সমকামিতা পরিবেশ-প্রতিবেশ উদ্ভুত আচরণজনিত কুঅভ্যাসের ফল কি না, বৈজ্ঞানিক গবেষণায় তার নিস্পত্তি হতে পারে। (২৩)
পক্ষে-বিপক্ষে বিজ্ঞানীরা (সত্যিকারের সত্যান্বেষী এবং ধান্দাবাজ, দুই ধরনেরই) এ নিয়ে তর্কে মেতে উঠতে পারেন। কিন্তু বিজ্ঞান বলে না, বলতে পারেনা, “সমকামিতা বিজ্ঞানসম্মত আচরণ নয়, তাই অনুচিত” কিংবা “চুরি-ডাকাতি করাটা বিজ্ঞানের নীতিবিরুদ্ধ”।
ধর্মাচ্ছন্ন গোষ্ঠীগুলি বিজ্ঞানের পর্যবেক্ষণকে (ক্ষেত্রবিশেষে পর্যবেক্ষণের অপব্যাখ্যাকে) নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার জন্য সবসময়ই সচেষ্ট। যখনই বিজ্ঞানের রায় তাদের অবস্থানের পক্ষে যায়, তখন তারা বিজ্ঞানের সেই পর্যবেক্ষণের পক্ষে জোর প্রচারণা চালান। যখন যায়না, তখন বলেন বিজ্ঞান অসম্পূর্ণ, অপর্যাপ্ত। উদাহরণ হিসাবে বলা যেতে পারে, সমকামীদের মধ্যে ‘এইডস’ রোগে আক্রান্তদের সংখ্যা বেশি এই পরিসংখ্যানকে ব্যবহার করে ধর্মবাদীরা দাবী করে থাকে যে, ধর্মীয় অনুশাসন না মেনে চললে ঈশ্বর এইভাবেই পাপীদের শাস্তি দেন। ‘এইডস’ রোগী ছাড়া অন্য পাপীরা কেন তাদের জীবদ্দশায় শাস্তি পাবে না এবং কেন মৃত্যুর পরে তাদের অনন্তকাল ধরে নরকের আগুনে পুড়তে হবে, এই প্রশ্নের কোন গ্রহণযোগ্য উত্তর এই ধর্মবাদীদের কাছ থেকে পাওয়া যায় না। আবার যখন, বিজ্ঞানসম্মত গবেষণার ফলাফলে প্রমাণিত হয় যে, প্রার্থনা কোন কাজেই আসে না, তখন এরা বলেন প্রার্থনা বিজ্ঞানের আওতাধীন বিষয় নয়, কিংবা বিজ্ঞান সবসময় নির্ভুল নয় ।(২৪) ফরিদ আহমেদের মুক্তমনায় প্রকাশিত “প্রার্থনা কি কোন কাজে আসে?” প্রবন্ধে প্রার্থনার অকার্যকারিতা সম্পর্কে একটা তথ্যনির্ভর আলোচনা আছে।(২৫)
বিজ্ঞান আদর্শের ভিত্তি হতে পারেনা। মুল্যবোধ, ন্যায়-অন্যায়, সুন্দর-অসুন্দরের তুলনা বিজ্ঞানের আওতার বাইরে। ধর্মের প্রবক্তারা, সৃষ্টিকর্তায় বিশ্বাসীরা, ধর্মকে বিজ্ঞানের প্রতিপক্ষ হিসেবে দাঁড় করিয়ে দেন, বিকল্প হিসেবে দেখেন। যে সব প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানের দেয়ার কথা, সে সবও দিয়ে দেয়ার প্রয়াস পান, এমনকি আজগুবি হলেও। আর যে সব প্রশ্নের উত্তর বিজ্ঞানে পাওয়ার কথা নয়, যেমন মূল্যবোধ, আদর্শ, ন্যায়-অন্যায়-সংক্রান্ত তা বিজ্ঞান দিতে পারেনা বলে অযথা বিজ্ঞানকে অকার্যকর বলে দাবী করে বসেন। এ প্রসঙ্গে বলা দরকার, এ ধরণের তর্কে স্বার্থান্বেষীরা বিজ্ঞানকে, বলা উচিৎ কিছু অসৎ বিজ্ঞানীকে, নিজেদের স্বার্থে ব্যবহার করার চেষ্টা করতে পারেন এবং করেছেনও। যেমন, একবার শুনেছিলাম, এক মিশরীয় কম্পিউটার প্রোগ্রামার কম্পিউটারকে দিয়ে ‘প্রমাণ’ করিয়েছেন যে, কোরান কোন মানুষের দ্বারা লিখিত হতে পারে না। বলা বাহুল্য প্রোগ্রামটা তিনি নিজেই লিখেছিলেন। এতে করে কোরান যে আসমানি কিতাব তা প্রমাণিত হয় নি, বরং কম্পিউটার বিজ্ঞানের জগতে প্রচলিত ‘গারবেজ ইন, গারবেজ আউট’ কথাটার আরেকটা ভাল উদাহরণ পাওয়া গিয়েছিল।
বিজ্ঞানের অর্জনকে ধর্মের পক্ষে কাজে লাগানোর এই ধরনের বালখিল্য উদাহরণ প্রচুর দেখা যায়, এ নিয়ে বিচলিত হওয়ার তেমন কোন কারণ দেখি না। তবে এর চেয়েও বিজ্ঞানের অনেক বেশি বিপজ্জনক ব্যবহার সম্ভব। বার্ট্রান্ড রাসেল বিজ্ঞানকে শুধু মারণাস্ত্র আর যুদ্ধাস্ত্র তৈরির জন্যই দায়ী করেন নি, তিনি পৃথিবীতে সেই সময়ের (১৯৩৫) অর্থনৈতিক অবস্থার নৈরাজ্যের জন্যও বিজ্ঞানকে প্রকারান্তরে দায়ী মনে করেছেন। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধপূর্ব সময়ে রাশিয়ায় কম্যুনিজম আর জার্মানিতে নাৎসীবাদের অভ্যুদয়ে রাসেল খুবই বিচলিত হয়েছিলেন এবং বিজ্ঞানের অগ্রযাত্রা পরোক্ষভাবে হলেও এ অবস্থার সৃষ্টি করেছে বলে মনে করতেন। তাঁর লেখা “রিলিজিয়ন এন্ড সায়েন্স”-এ এই আশংকা ব্যক্ত করেছেন যে, এই যুগে বিজ্ঞানের চ্যালেঞ্জ আর ধর্ম বা চার্চ থেকে আসবেনা, আসবে আধিপত্যবাদী সরকারগুলো থেকে। এবং এরা ধর্মকে নয়, বরং বিজ্ঞানকেই ব্যবহার করতে চাইবে তাদের আধিপত্য বজায় রাখার জন্য। সুযোগ বুঝে এরা নিজেদের সেক্যুলার বলেও দাবী করবে, এবং বিজ্ঞানের দোহাই দিয়ে নিপীড়ন-নির্যাতন চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ খুঁজবে। প্রথমেই বলি হবে বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা (intellectual freedom)। বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতার ওপরেই নির্ভর করে বিজ্ঞানের অগ্রগতি, আর এখানেই রাসেলের আশংকা।(২৬) এই আশংকা মোটেও অবাস্তব নয় এবং তখনকার (১৯৩৫) তুলনায় এই যুগে মনে হয় তা আরো বেশি, যদিও ভিন্ন মাত্রার এবং ভিন্ন চরিত্রের। প্রসঙ্গটা এই রচনার মূল বিষয়বস্তুর বাইরে বলে বিস্তারিত আলোচনার সুযোগ নাই তবে রাসেলের মতো আমিও মত প্রকাশের স্বাধীনতা অক্ষুন্ন রাখার জন্য সোচ্চার হওয়ার প্রয়োজন আছে বলে মনে করি । বিশেষ করে, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের এ ব্যপারে সচেতন থাকা উচিৎ।
ধর্ম কি প্রয়োজনীয়?
প্রথমে দেখা যাক বার্ট্রান্ড রাসেল এ সম্পর্কে কি বলেছেন। ১৯৩৫ এ যখন রাসেলের বিখ্যাত “রিলিজিয়ন এন্ড সায়েন্স” প্রকাশিত হয় তখন সমাজে ধর্মের দাপট ছিল নিসন্দেহে আজকের তুলনায় অনেক বেশি। (১৯৫০এ রাসেলের সাহিত্যে নোবেল পুরস্কার পাওয়ার অন্যতম কারন এই বইটা।) যদিও ডারউইনের বিবর্তনতত্ত্ব ইতোমধ্যে ধর্মের ভিত্তিমূলে জোরেশোরে নাড়া লাগিয়েছে।
রাসেলের মতে, ক্রিড (Creed, যাকে আমি বলছি ‘বিশ্বাসব্যবস্থা’) হচ্ছে ধর্ম আর বিজ্ঞানের মধ্যকার সংঘাতের বুদ্ধিবৃত্তিক উৎস। অনেক ধর্মাচ্ছন্ন মানুষ নিজেদের ব্যক্তিগত নীতিবোধ আর মূল্যবোধ আহরণ করেন এই বিশ্বাসব্যবস্থা থেকে। আর এই জন্যই তারা ধর্মকে মনে করেন অপরিহার্য। ব্যাপারটা রাসেল সুন্দর করে বুঝিয়েছেন ‘খুন করা কেন খারাপ কাজ’ এই প্রশ্নের অবতারণা করে; নীচের অংশটা রাসেলের এই সম্পর্কিত লেখার ভাবানুবাদ।(২৭)
ধরা যাক এক বেয়াড়া সংশয়বাদী এক পুরোহিতকে প্রশ্ন করে বসলো, “আচ্ছা বলতো, খুন করলে কি হবে? আমি কেন খুন করবো না?” বলা যেতে পারতো, “তাহলে তোমার ফাঁসি হবে”। কিন্তু ফাঁসি কেন হবে তার পেছনে তেমন জোরালো নৈতিক বা তাত্ত্বিক ব্যাখ্যা নাই, আর ফাঁসি যে হবেই (ধরা যাক, পুলিশের দূর্নীতিপরায়নতা বা অযোগ্যতার কারণে) তারও কোন নিশ্চয়তা নাই। তাই পুরোহিতের পক্ষে খুব সহজ উত্তর হবে, “ধর্মে নিষেধ, মানুষ হত্যা মহাপাপ, পরকালে শাস্তি অবধারিত”। তর্কের খাতিরে মেনে নেয়া যায় এতে কাজ হতেও পারে এবং সেই বেয়াড়া মানুষটা খুন করা থেকে নিজেকে নিবৃত্ত রাখবে পরকালে শাস্তির ভয়ে । কিন্তু মুশকিল হচ্ছে, ধর্ম মানলে সূর্য পৃথিবীর চারদিকে ঘুরছে তাও, এবং এই ধরনের আরও অনেক মিথ্যা ও আজগুবি কথা, মেনে নিতে হয়, আর না মানলে ওই বেয়াড়া মানুষটাকে খুন করা থেকে নিবৃত্ত রাখা যাবে না এই ধরনের একটা আশংকার সৃষ্টি হয়।
রাসেলের মতে ধর্ম যে আজো টিকে আছে তার একটা বড় কারণ এই ধরনের আশংকা। কিন্তু খুন করা যে অন্যায়, অনৈতিক কাজ, এই মূল্যবোধ কি ধর্মীয় শিক্ষার ওপর নির্ভরশীল? হার্ভাডের অধ্যাপক মার্ক হউজারের (Marc Hauser) মতে নীতিবোধ বিশ্বজনীন বা ‘ইউনিভার্সাল’। মানব সভ্যতায় ভাষার উদ্ভবের মতো নীতিবোধেরও উদ্ভব ঘটেছে। সব ভাষার ব্যাকরণের মধ্যে (সংস্কৃতিভেদে তারতম্য থাকলেও সব ভাষার অন্তর্নিহিত কাঠামোর গভীরে) আছে বিশ্বজনীনতা, ঠিক তেমনি নীতিবোধের মধ্যেও একই ধরনের বিশ্বজনীনতা দেখা যায়। এর মধ্যে ধর্মের কোন প্রভাব আছে বলে প্রমাণ পাওয়া যায় না, কোন বিশেষ ধর্মের তো নয়ই।(২৮) জীবজগতের বিবর্তনের মতো মানুষের মনোজগতেও বিবর্তনের প্রক্রিয়া কাজ করে। অপার্থিব জামান তাঁর "ধর্মই কি নৈতিকতার উৎস?" প্রবন্ধে এর ওপরে তথ্যপূর্ণ আলোচনা করেছেন।(২৯) উপসংহারে বলেছেন, নৈতিক আচরণ হচ্ছে ব্যক্তি বা জনগোষ্ঠীর ক্রমবিবর্তমান বৈশিষ্ট্য।
দেখা যাচ্ছে বিবেকবোধ, নীতিবোধ, মূল্যবোধ, বিচারবোধ, ন্যায়-অন্যায়ের ধারণা, এসবের উৎস ধর্ম নয়। ধর্মপরায়ন না হয়েও বিবেকবান মানুষ হওয়া যায়। নরকের ভয়ে পাপকার্য্য থেকে বিরত থাকার, আর স্বর্গের লোভে পূণ্যকাজ করার মধ্যে যে সত্যিকারের মূল্যবোধের এবং নীতিবোধের পরিচয় পাওয়া যায় না, তা কি বুঝিয়ে বলার দরকার আছে? তাহলে ধর্মের প্রয়োজন কোথায়?
কিন্তু ধর্মের অনুপস্থিতিতে, ডকিন্সের স্বভাবজাত ভাষায়, মানুষের মগজে ঈশ্বর-সাইজের যে গর্তটির (গ্যাপ) সৃষ্টি হবে তাকে ভরাট করা হবে কি দিয়ে? ডকিন্স এর উত্তর দিয়েছেন - বলেছেন বিজ্ঞান দিয়ে, প্রতিনিয়ত সত্যানুসন্ধান যার কাজ। ডকিন্সের আশা এর মধ্য দিয়েই গড়ে উঠবে নতুন এক পৃথিবী - মিথ্যা নয়, সত্যের ভিত্তিতে।(৩০)
আমি বলবো, শুধু বিজ্ঞান দিয়ে নয়, বিজ্ঞানমনস্ক মানুষদের দিয়ে গড়ে উঠবে যে কালচার বা সংস্কৃতি তাই দিয়ে। অধ্যাপক সিরাজুল ইসলাম চৌধুরীর ভাষায়, “চুড়ান্ত বিচারে সংস্কৃতি হচ্ছে রুচি। ওই রুচিতে ভালো-মন্দের বোধ আছে, আছে আকাঙ্ক্ষা, সৃষ্টির স্পৃহা। রুচিকে সূক্ষ্ণ বলা হয়, কিন্তু রুচিতেই সংস্কৃতি ধরা পড়ে; অভিব্যক্ত হয় নিজস্বতা ও মৌলিকত্ব। এই রুচিটা সমষ্টিগত, ব্যক্তি যার অংশীদার”।(৩১)
যে সংস্কৃতির কথা এখানে বলা হচ্ছে তার ভিত্তি ধর্ম, জাতীয়তা, রাষ্ট্র বা অঞ্চল নয়, তার ভিত্তি হচ্ছে বিজ্ঞানমনস্কতা। মোতাহার হোসেন চৌধুরী এই সংস্কৃতির কথাই ভেবেছেন ধর্মের বিকল্প হিসেবে। নোবেল বিজয়ী অর্থনীতিবিদ অমর্ত্য সেনও এই বিশ্বজনীন কালচারের প্রয়োজনীয়তার কথা লিখেছেন তাঁর ‘আইডেন্টিটি এন্ড ভায়োলেন্স' (Identity and Violence) বইয়ে।(৩২) অমর্ত্য সেন সাংস্কৃতিক স্বাধীনতার ওপরেও গুরুত্ব দিয়েছেন, অনেকটা বার্ট্রান্ড রাসেলের ‘বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা’র মতো করে। মত প্রকাশের স্বাধীনতা, সাংস্কৃতিক স্বাধীনতা, আর বুদ্ধিবৃত্তিক স্বাধীনতা নতুন সত্য আবিস্কারের জন্য জরুরী। আর নতুন সত্য আবিস্কার করাইতো বিজ্ঞানের কাজ। রাসেলের কথা, “নতুন সত্য প্রায়শই অস্বস্তিকর, বিশেষত ক্ষমতাধরদের কাছে; কিন্তু নিষ্ঠুরতা এবং বর্বরতার কদর্য ইতিহাস সত্বেও, আমাদের বুদ্ধিসম্পন্ন, যদিও দূর্বিনীত, মানবপ্রজাতির এটাই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অর্জন”।(৩৩)
শেষের কথা
ধর্ম বিজ্ঞান হিসাবে ব্যর্থ কারণ ধর্ম ভুল ধারণা, মিথ্যা গল্প-কাহিনী আর আজগুবি কল্পনার উপর নির্ভরশীল, সংস্কৃতির বিকল্প হিসাবে পশ্চাদপদ কারণ ধর্ম মানুষকে রুচিশীল হওয়ার প্রেরণা যোগায়না; ধর্ম মুল্যবোধের উৎস হিসাবে অপ্রয়োজনীয়, কারণ মূল্যবোধ ধর্মের চোখে পুরস্কার-তিরস্কারের অর্থহীন এবং অনৈতিক মাপকাঠিতে বিচার্য; এবং ধর্ম এমন কি আধ্যাত্মিকতার বিকাশেও নিতান্তই অপ্রতুল এবং নিম্নমানের।
ধর্মকে বাদ দিয়েই গড়ে তুলতে হবে জীবনমুখী সংস্কৃতি, যার মূলে থাকবে সুরুচি - সমষ্টিগত এবং ব্যক্তিগত। সংস্কৃতিই হবে ব্যক্তিক এবং সামাজিক দায়িত্ববোধ, মূল্যবোধ আর নীতিবোধের ধারক ও বাহক। সম্মিলিত সচেতনতা (collective consciousness)-র উৎস হবে কালচার, ধর্ম নয়। রুচিশীল সংস্কৃতিতে আধ্যাত্মিকতা হবে সত্যিকারের উপভোগের বিষয়, বিকৃত অতিপ্রাকৃতিক (Supernatural) চিন্তা-চেতনার উৎস না হয়ে। মানুষ আধ্যাত্মিকতার বিকাশ ও প্রকাশ উপভোগ করবে, সংগীতের মূর্ছনায়, কবিতার কাব্যময়তায়, ধর্মের অন্ধ চোরাগলিতে নয় । সৌন্দর্যের অভিব্যক্তি খুঁজবে সাহিত্যে, শিল্পকলায়। রুচির উৎকর্ষতা দেবে উন্নত সংস্কৃতি, আর উন্নত সংস্কৃতি গড়বে উন্নত সমাজ।
মিথ্যা আর আজগুবি গল্প-কাহিনীর ওপর ভিত্তি করে উন্নত ন্যায়ভিত্তিক সমাজ যে গড়ে তোলা যায় না, তা তো আর চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিতে হবে না। ধর্মভিত্তিক সমাজ বা রাষ্ট্র মানুষকে অন্যায়-অনাচার থেকে মুক্তি দিয়েছে, মানবসভ্যতার ইতিহাসে তা দেখা যায় না। বরঞ্চ যুগে যুগে ধর্মকেই দেখা গেছে, অন্যায়-অনাচার, নিপীড়ন-নির্যাতনের কাজে খুবই কার্যকরী হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহৃত হতে।
তাই, ধর্মাচ্ছন্ন অন্ধকারে উন্নত সংস্কৃতি গড়ে তোলার জন্য বিজ্ঞানমনস্ক আলোকিত মানুষ চাই আরো, আরো অনেক। ধর্মের নামে সঙ্গবদ্ধ পাগলামী (collective madness) নয়, চাই কালচারের চর্চার ফলে ঋদ্ধ সম্মিলিত সচেতনতা (collective consciousness)।
ধর্মাচ্ছন্ন স্রোতে বিজ্ঞানমনস্ক ধারাটি ক্ষীণ হলেও উজ্জ্বলতায় ভাস্বর। একদিন ধর্মাচ্ছন্নতাকে ছাপিয়ে এই বিরুদ্ধ ধারাটিই পরিণত হবে প্রবল স্রোতে, বিজ্ঞানের ইতিহাস তাই বলে।
সম্পূর্ণ লেখাটি পিডিএফ এ পড়তে বা ডাউনলোড করতে এখানে ক্লিক করুন
তথ্যনির্দেশ
(১) আরজ আলী মাতুব্বর, রচনাসমগ্র, পাঠক সমাবেশ, ঢাকা, ১৯৯৪।
(২) উইলিয়াম প্যালির Natural Theology – or Evidences of the Existence and Attributes of the Deity Collected from the Appearances of Nature থেকে। Translation of:
“. . . when we come to inspect the watch, we perceive. . . that its several parts are framed and put together for a purpose, e.g. that they are so formed and adjusted as to produce motion, and that motion so regulated as to point out the hour of the day; that if the different parts had been differently shaped from what they are, or placed after any other manner or in any other order than that in which they are placed, either no motion at all would have been carried on in the machine, or none which would have answered the use that is now served by it. . . . the inference we think is inevitable, that the watch must have had a maker -- that there must have existed, at some time and at some place or other, an artificer or artificers who formed it for the purpose which we find it actually to answer, who comprehended its construction and designed its use.”
Available: http://www.ucmp.berkeley.edu/history/paley.html
(৩) রিচার্ড ডকিন্স, (Richard Dawkins)The Blind Watchmaker, W. W. Norton & Company, Inc. New York, 1987, p. 5. Translation of:
“All appearances to the contrary, the only watchmaker in nature is the blind forces of physics, albeit deployed in a very special way. A true watchmaker has foresight: he designs his cogs and springs, and plans their interconnections, with a future purpose in this mind’s eye. Natural selection, the blind, unconscious, automatic process which Darwin discovered, and which we now know is the explanation for the existence and apparently purposeful form of all life, has no purpose in mind. It has no mind and no mind’s eye. It does not plan for the future. It has no vision, no foresight, no sight at all. If it can be said to play the role of watchmaker in nature, it is the blind watchmaker.”
(৪) রিচার্ড ডকিন্স, (Richard Dawkins), The God Delusion, Transworld Publishers, London, 2006, p. 366. Translation of:
“The evolution of complex life, indeed its very existence in a universe obeying physical laws, is wonderfully surprising – or would be but for the fact that surprise is an emotion that can exist only in a brain which is the product of that very surprising process.”
(৫) রিচার্ড ডকিন্স, (Richard Dawkins), The God Delusion, Transworld Publishers, London, 2006, p. 15. Einstein as quoted:
“I am a deeply religious nonbeliever. This is a somewhat new kind of religion. I have never imputed to Nature a purpose or a goal, or anything that could be understood as anthropomorphic. What I see in Nature is a magnificent structure that we can comprehend only very imperfectly, and that must fill a thinking person with a feeling of humility. This is a genuinely religious feeling that has nothing to do with mysticism. The idea of a personal God is quite alien to me and seems even naïve.”
(৬) ইলিয়া প্রিগোজিন ও ইসাবেল স্টেঞ্জারস, (Ilya Prigogine and Isabelle Stengers) Order Out of Chaos, Man’s New Dialogue with Nature, Bantam Books, New York, 1984. Brief paraphrase of:
"While some parts of the universe may operate like machines, these are closed systems, and closed systems, at best, form only a small part of the physical universe. Most phenomena of interest to us are, in fact, open systems, exchanging energy or matter (and one might add, information) with their environment. Surely biological and social systems are open, which means that the attempt to understand them in mechanistic terms is doomed to failure.” Available: http://www.talkorigins.org/faqs/faq-meritt/complexity.html#chaos
(৭) অভিজিৎ রায়, “ব্যাড ডিজাইন”, মুক্তমনা। Available: http://www.mukto-Mona.com/Special_Event_/Darwin_day/2007/avi_bad_design.pdf
(৮) আলফ্রেড রাসেল ওয়ালেস (১৮২৩-১৯১৩), আলাদাভাবে বিবর্তনতত্ত্বের আবিস্কারে অবদান রাখার জন্য ডারউইনের সাথে সাথে ওয়ালেসকেও কৃতিত্বের দাবীদার মনে করা হয়।
“Alfred Russel Wallace - Darwin began formulating his theory of natural selection in the late 1830s but he went on working quietly on it for twenty years. He wanted to amass a wealth of evidence before publicly presenting his idea. During those years he corresponded briefly with Wallace, who was exploring the wildlife of South America and Asia. Wallace supplied Darwin with birds for his studies and decided to seek Darwin's help in publishing his own ideas on evolution. He sent Darwin his theory in 1858, which, to Darwin's shock, nearly replicated Darwin's own.” Available:
http://evolution.berkeley.edu/evolibrary/article/_0/history_14
(৯) রিচার্ড ডকিন্স, (Richard Dawkins)The Blind Watchmaker, W. W. Norton & Company, Inc. New York, 1987, (Preface). Translation of:
“It is almost as if the human brain were specifically designed to misunderstand Darwinism, and to find it hard to believe. …. our brains seem predisposed to resist Darwinism stems from our great success as creative designers. Our world is dominated by feats of engineering and works of art. We are entirely accustomed to the idea that complex elegance is an indicator of premeditated, crafted design. …. It took a very large leap of the imagination for Darwin and Wallace to see that, contrary to all intuition, there is another way and, once you have understood it, a far more plausible way, for complex “design” to arise out of primeval simplicity. A leap of imagination so large that, to this day, many people seem still unwilling to make it.”
(১০) বার্ট্রান্ড রাসেল, (Bertrand Russell), Religion and Science, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997, p. 21.
(১১) বার্ট্রান্ড রাসেল, (Bertrand Russell), Religion and Science, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997, p. 215. Translation of:
“People are more unwilling to give up the word “God” than to give up the idea for which the word has hitherto stood.”
(১২) মাইকেল রিউস, (Michael Ruse), Introduction to Religion and Science, by Bertrand Russell, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997.
(১৩) মাইকেল রিউসের ওয়েবসাইট
Available: http://www.fsu.edu/~philo/new%20site/staff/ruse.htm
(১৪) বার্ট্রান্ড রাসেল, (Bertrand Russell), Religion and Science, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997, p. 22.
(১৫) স্টিফেন গুল্ড, (Stephen J. Gould), Nonoverlapping Magisteria, The Unofficial Stephen Jay Gould Archive. Brief paraphrase of:
“I believe, with all my heart, in a respectful, even loving concordat between our magisteria—the NOMA solution. NOMA represents a principled position on moral and intellectua] grounds, not a mere diplomatic stance. NOMA also cuts both ways. If religion can no longer dictate the nature of factual conclusions properly under the magisterium of science, then scientists cannot claim higher insight into moral truth from any superior knowledge of the world's empirical constitution. This mutual humility has important practical consequences in a world of such diverse passions.”
Available: http://www.stephenjaygould.org/library/gould_noma.html
(১৬) রিচার্ড ডকিন্স, (Richard Dawkins), “When Religion Steps on Science's Turf
The Alleged Separation Between the Two Is Not So Tidy”, Council for Secular Humanism. Brief paraphrase of:
“There is something dishonestly self-serving in the tactic of claiming that all religious beliefs are outside the domain of science. On the one hand, miracle stories and the promise of life after death are used to impress simple people, win converts, and swell congregations. It is precisely their scientific power that gives these stories their popular appeal. But at the same time it is considered below the belt to subject the same stories to the ordinary rigors of scientific criticism: these are religious matters and therefore outside the domain of science. But you cannot have it both ways. At least, religious theorists and apologists should not be allowed to get away with having it both ways. Unfortunately all too many of us, including nonreligious people, are unaccountably ready to let them.”
Available: http://www.secularhumanism.org/library/fi/dawkins_18_2.html
(১৭) তানবীরা তালুকদার, “বিজ্ঞানের অঙ্গনে যখন ধর্মের প্রবেশঃ দুটো যৌক্তিক পার্থক্য কি এত সহজ?” মুক্তমনা। Available: https://gold.mukto-mona.com/Articles/talukder/dhormo_pobeshDawkins.htm
(১৮) বার্ট্রান্ড রাসেল, (Bertrand Russell), Religion and Science, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997, p. 16. Translation of:
“The men of science did not ask that propositions should be believed because some important authority had said they were true; on the contrary, they appealed to the evidence of the senses, and maintained only such doctrines as they believed to be based upon facts which were patent to all who chose to make the necessary observations. The new method achieved such immense successes, both theoretical and practical, that theology was gradually forced to accommodate itself to science.”
(১৯) মোতাহার হোসেন চৌধুরী, সংস্কৃতি কথা, নওরোজ কিতাবিস্তান, ঢাকা, ১৯৯৯।
(২০) Jackson Dykman, “The Marketplace of Faith,” Time, March 10, 2008, p. 41.
(২১) Available: http://rrkelkar.wordpress.com/2007/07/28/gods-role-in-natural-disasters/
(২২) বার্ট্রান্ড রাসেল, (Bertrand Russell), Religion and Science, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997, p. 243. Translation of:
“Whatever knowledge is attainable, must be attained by scientific methods; and what science cannot discover, mankind cannot know.”
(২৩) অপবিজ্ঞানের উদাহরণ হিসেবে উল্লেখ করা যেতে পারে এই বইটার কথা, The Bell Curve -Intelligence and Class Structure in American Life - Herrnstein & Murray, New York: The Free Press, 1994। আমেরিকান কৃষ্ণাঙ্গদের বুদ্ধি কেন শ্বেতাঙ্গদের চেয়ে কম এবং কেন তাদের মধ্যে অপরাধপ্রবনতা বেশি তার ফিরিস্তি দেয়া হয়েছে এই বইটাতে পরিসংখ্যান বিদ্যার (অপ)ব্যাবহার করে। ইঙ্গিত দেয়া হয়েছে যে, কারণটা ‘জেনেটিক’।
(২৪) রিচার্ড ডকিন্স, (Richard Dawkins),”The Great Prayer Experiment,” The God Delusion, Transworld Publishers, London, 2006, p. 61.
(২৫) ফরিদ আহমেদ, “প্রার্থনা কি কোন কাজে আসে?” মুক্তমনা।
Available: https://gold.mukto-mona.com/Articles/farid_ahmed/prayer.pdf
(২৬) বার্ট্রান্ড রাসেল, (Bertrand Russell), Religion and Science, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997, p. 251.
(২৭) বার্ট্রান্ড রাসেল, (Bertrand Russell), Religion and Science, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997, p. 10-11.
(২৮) মার্ক হউজার, (Marc Hauser), Marc Hauser Discusses Moral Grammar,
Available: http://formsmostbeautiful.blogspot.com/2008/04/marc-hauser-discusses-moral-grammar.html, and
Marc Hauser and Peter Singer, Morality without Religion, www.secularhumanism.org, Dec. 2005-Jan. 2006,
Available: http://www.centerforinquiry.net/uploads/attachments/HauserSinger.pdf
(২৯) অপার্থিব জামান, “ধর্মই কি নৈতিকতার উৎস?” মুক্তমনা।
Available: https://gold.mukto-mona.com/Articles/aparthib/noitikota_aparthib.pdf
(৩০) রিচার্ড ডকিন্স, (Richard Dawkins), The God Delusion, Transworld Publishers, London, 2006, p. 361.
(৩১) সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী, “রাজনীতি থাকবে সামনে, শক্তি থাকবে সংস্কৃতিতে,”
সমাজচিত্র, দৈনিক সমকাল, ২৪শে এপ্রিল, ২০০৮।
(৩২) অমর্ত্য সেন, (Amartya Sen), Identity and Violence, W. W. Norton & Company, Inc., 2006, New York, p. 112.
(৩৩) বার্ট্রান্ড রাসেল, (Bertrand Russell), Religion and Science, Oxford University Press, Oxford and New York, 1997, p. 252. Translation of:
“New truth is often uncomfortable, especially to the holders of power; nevertheless, amid the long record of cruelty and bigotry, it is most important achievement of our intelligent but wayward species.”
১৬ মে, ২০০৮
ইরতিশাদ আহমদ পেশায় প্রকৌশলী। তার লেখাটি আমাদের মুক্তমনার পরবর্তী বই -‘বিজ্ঞান ও ধর্ম – সংঘাত নাকি সমন্বয়?’– প্রকাশিতব্য সংকলন-গ্রন্থের জন্য নির্বাচিত হল - মুক্তমনা সম্পাদক।